Last Updated on July 4, 2025 by বিডি কিক
বাংলাদেশের মতো গরম ও আর্দ্র আবহাওয়ার দেশে পানিশূন্যতা বা ডিহাইড্রেশন একটি খুবই সাধারণ কিন্তু মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যা। অনেক সময় আমরা বুঝতেই পারি না যে আমাদের শরীর প্রয়োজনের তুলনায় কতটা পানি হারাচ্ছে। শরীরে পানির পরিমাণ কমে গেলে তা আমাদের শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে।
কিন্তু এই পানিশূন্যতা আসলে কেন হয়? শুধুমাত্র পানি কম পান করলেই কি এই সমস্যা দেখা দেয়, নাকি এর পেছনে আরও কোনো কারণ রয়েছে? এই আর্টিকেলে আমরা পানিশূন্যতা বা ডিহাইড্রেশন হওয়ার প্রধান কারণগুলো এবং এর থেকে বাঁচার সহজ উপায় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
পানিশূন্যতা বা ডিহাইড্রেশন কী?
যখন আমাদের শরীর থেকে গ্রহণ করা তরলের চেয়ে বেশি পরিমাণে তরল (পানি ও খনিজ লবণ) বেরিয়ে যায়, তখন যে ঘাটতি তৈরি হয়, তাকেই পানিশূন্যতা বা ডিহাইড্রেশন বলে।
পানিশূন্যতা হওয়ার প্রধান কারণসমূহ
১. পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান না করা
এটি পানিশূন্যতার সবচেয়ে সাধারণ এবং প্রধান কারণ। আমাদের শরীরের প্রতিটি কোষের সঠিক কার্যক্রমের জন্য পানি অপরিহার্য। প্রতিদিন কাজের চাপে বা অন্য কোনো কারণে আমরা পরিমাণমতো পানি পান করতে ভুলে যাই। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দৈনিক ২-৩ লিটার পানি পান করা উচিত। এর থেকে কম হলেই শরীরে পানির ঘাটতি দেখা দিতে পারে।
২. অতিরিক্ত ঘাম
গরম আবহাওয়া, অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম, ব্যায়াম বা জ্বরের কারণে আমাদের শরীর প্রচুর পরিমাণে ঘামে। এই ঘামের সাথে শুধুমাত্র পানি নয়, সোডিয়াম এবং পটাশিয়ামের মতো প্রয়োজনীয় খনিজ লবণও (ইলেক্ট্রোলাইটস) শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। ফলে খুব দ্রুত ডিহাইড্রেশন হতে পারে।
৩. ডায়রিয়া ও বমি
ডায়রিয়া এবং বমি পানিশূন্যতার অন্যতম প্রধান কারণ। এই দুটি সমস্যা হলে শরীর থেকে খুব অল্প সময়ের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে পানি ও ইলেক্ট্রোলাইটস বেরিয়ে যায়। বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে ডায়রিয়াজনিত পানিশূন্যতা খুবই বিপজ্জনক হতে পারে।
৪. ঘন ঘন প্রস্রাব
কিছু শারীরিক অবস্থা বা ওষুধের কারণে ঘন ঘন প্রস্রাব হতে পারে, যা শরীরকে পানিশূন্য করে তোলে। যেমন:
- ডায়াবেটিস: অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসের কারণে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে গেলে শরীর অতিরিক্ত শর্করা প্রস্রাবের মাধ্যমে বের করে দেওয়ার চেষ্টা করে, যা ডিহাইড্রেশনের কারণ হয়।
- ডাইইউরেটিকস (Diuretics): উচ্চ রক্তচাপের কিছু ওষুধ প্রস্রাবের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়, যা পানিশূন্যতার ঝুঁকি বাড়ায়।
৫. জ্বর বা অন্যান্য অসুস্থতা
জ্বরের সময় শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি পানি বাষ্পীভূত হয়। এছাড়া অসুস্থতার সময় খাবারের প্রতি অনীহা এবং দুর্বলতার কারণে পানি পানের পরিমাণও কমে যায়, যা ডিহাইড্রেশনের ঝুঁকি বাড়ায়।
৬. অতিরিক্ত ক্যাফেইন বা অ্যালকোহল গ্রহণ
চা, কফি বা অন্যান্য ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় এবং অ্যালকোহল শরীর থেকে পানি বের করে দেয় (diuretic effect)। তাই এই ধরনের পানীয় অতিরিক্ত পরিমাণে পান করলে সাময়িকভাবে পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে।
৭. পুড়ে যাওয়া (Burns)
শরীরের কোনো অংশ পুড়ে গেলে ত্বকের প্রতিরক্ষামূলক স্তরটি নষ্ট হয়ে যায়, ফলে সেই স্থান থেকে প্রচুর পরিমাণে পানি বাষ্পীভূত হয়ে বেরিয়ে যায়। মারাত্মকভাবে পুড়ে গেলে এটি গুরুতর ডিহাইড্রেশনের কারণ হতে পারে।
পানিশূন্যতার সাধারণ লক্ষণ
- তীব্র তৃষ্ণা পাওয়া।
- মুখ ও ঠোঁট শুকিয়ে যাওয়া।
- প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া এবং প্রস্রাবের রঙ হলুদ বা গাঢ় হলুদ হওয়া।
- শরীর দুর্বল লাগা বা ক্লান্তি বোধ করা।
- মাথা ঘোরা বা মাথাব্যথা।
পানিশূন্যতা রোধে করণীয়
- প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে (২-৩ লিটার) বিশুদ্ধ পানি পান করুন।
- গরমকালে বা ব্যায়ামের সময় পানি পানের পরিমাণ বাড়িয়ে দিন।
- ডায়রিয়া বা বমি হলে পর্যাপ্ত পরিমাণে খাবার স্যালাইন (ORS) গ্রহণ করুন।
- খাদ্যতালিকায় পানি সমৃদ্ধ ফল ও সবজি, যেমন—তরমুজ, শসা, কমলা ইত্যাদি রাখুন।
- অতিরিক্ত চা, কফি এবং অ্যালকোহল গ্রহণ থেকে বিরত থাকুন।
শেষ কথা: পানিশূন্যতা একটি প্রতিরোধযোগ্য সমস্যা। আমাদের শরীরের ছোট ছোট সঙ্কেত, যেমন—তৃষ্ণা পাওয়া বা প্রস্রাবের রঙ পরিবর্তন হওয়া—এসব বিষয়ে সচেতন থাকলেই আমরা ডিহাইড্রেশনের মতো বড় সমস্যা থেকে সুরক্ষিত থাকতে পারি। তাই সুস্থ থাকতে পর্যাপ্ত পানি পান করুন এবং শরীরকে সতেজ রাখুন।