Last Updated on July 7, 2025 by বিডি কিক
আমাদের আগের পোস্টে “অনলাইন আয়” করার বিভিন্ন উপায় নিয়ে আলোচনার পর অনেকেই ফ্রিল্যান্সিং, বিশেষ করে ফাইভার (Fiverr) নিয়ে আগ্রহ দেখিয়েছেন। হয়তো আপনিও তাদের একজন, যিনি ফাইবারে একটি অ্যাকাউন্ট খুলে, সুন্দর একটি গিগ তৈরি করে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন। কিন্তু দিনের পর দিন পার হয়ে গেলেও যখন কোনো বায়ারের মেসেজ আসে না, তখন হতাশ হওয়াটাই স্বাভাবিক।
চিন্তা করবেন না, এই সমস্যাটি শুধু আপনার একার নয়। প্রত্যেক সফল ফ্রিল্যান্সারকেই এই কঠিন পর্যায়টি পার করতে হয়েছে।
এই পোস্টটি শুধু “ফাইভার কী” তা জানানোর জন্য নয়। এটি একটি সম্পূর্ণ কর্মপরিকল্পনা, যা আপনাকে আপনার প্রথম অর্ডার পেতে ধাপে ধাপে সাহায্য করবে। চলুন, সেই কার্যকরী উপায়গুলো জেনে নেওয়া যাক।
ধাপ ১: একটি আকর্ষণীয় এবং ১০০% সম্পূর্ণ প্রোফাইল তৈরি
আপনার প্রোফাইল হলো আপনার ডিজিটাল পরিচয়। একজন ক্লায়েন্ট আপনার গিগে আসার পর প্রথমে আপনার প্রোফাইলটিই দেখে। একটি অসম্পূর্ণ প্রোফাইল ক্লায়েন্টের মনে সন্দেহ তৈরি করে। তাই নিশ্চিত করুন:
- প্রফেশনাল প্রোফাইল ছবি: একটি পরিষ্কার, হাসিমুখের ছবি ব্যবহার করুন। কোনো সেলফি বা ফিল্টার দেওয়া ছবি নয়, আপনার মুখ যেন স্পষ্টভাবে বোঝা যায়।
- আকর্ষণীয় ট্যাগলাইন (Tagline): আপনার ছবির নিচেই একটি লাইনে আপনি কী করেন তা লিখুন। যেমন: “Content Writer for Blogs” বা “Expert in Background Removal”।
- বিস্তারিত ডেসক্রিপশন (Description): আপনি কে, আপনার কী কী দক্ষতা আছে, এবং আপনি কীভাবে ক্লায়েন্টকে সাহায্য করতে পারেন, তা বিস্তারিতভাবে লিখুন।
- স্কিল টেস্ট (Skill Test): আপনার দক্ষতার সাথে সম্পর্কিত ফাইভারেরฟรี স্কিল টেস্টগুলো দিন। এটি আপনার প্রোফাইলে একটি ব্যাজ যোগ করবে এবং ক্লায়েন্টের বিশ্বাস বাড়াবে।
ধাপ ২: কম প্রতিযোগিতার কিন্তু উচ্চ চাহিদার গিগ (Gig) রিসার্চ
ফাইবারে সফল হওয়ার সবচেয়ে বড় গোপন রহস্য হলো সঠিক গিগ আইডিয়া বেছে নেওয়া। সবাই যে গিগ তৈরি করছে (যেমন: “I will design a logo”), সেই একই গিগ তৈরি করলে প্রতিযোগিতায় হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এর পরিবর্তে একটি “নিশ” (Niche) বা নির্দিষ্ট বিষয়ে ফোকাস করুন।
উদাহরণ: “Logo Design” এর পরিবর্তে “Minimalist Logo Design for Startups” বা “Hand-drawn Vintage Logo” এর মতো নির্দিষ্ট বিষয়ে গিগ তৈরি করুন। এতে প্রতিযোগিতা কম থাকবে এবং সঠিক ক্লায়েন্ট খুঁজে পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে।
ধাপ ৩: একটি পারফেক্ট গিগ তৈরি করার গোপন কৌশল
আপনার গিগ হলো আপনার দোকানের পণ্য। এটিকে যতটা সম্ভব আকর্ষণীয় করে তুলতে হবে।
নজরকাড়া গিগ টাইটেল এবং URL
আপনার টাইটেলটি যেন আপনার কাজকে পরিষ্কারভাবে তুলে ধরে। “I will do data entry” এর চেয়ে “I will do fast and accurate data entry” অনেক বেশি কার্যকর।
সঠিক কীওয়ার্ড ব্যবহার করে গিগ ডেসক্রিপশন
আপনার গিগের ডেসক্রিপশনে ক্লায়েন্ট কী কী সমস্যার সমাধান পাবে তা বিস্তারিতভাবে লিখুন। বুলেট পয়েন্ট ব্যবহার করে আপনার সেবার বৈশিষ্ট্যগুলো তুলে ধরুন এবং প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQ) সেকশনটি অবশ্যই পূরণ করুন।
আকর্ষণীয় গিগ ইমেজ ও ভিডিও
ফাইবারে ৯০% ক্লায়েন্ট গিগের ছবির উপর ভিত্তি করে ক্লিক করে। আপনি বিনামূল্যে Canva ব্যবহার করে খুব সহজেই প্রফেশনাল মানের গিগ ইমেজ তৈরি করতে পারেন। সম্ভব হলে, ৩০-৬০ সেকেন্ডের একটি ভিডিও যুক্ত করুন, যেখানে আপনি আপনার কাজ সম্পর্কে বলছেন। ভিডিওসহ গিগগুলো ২০০% বেশি অর্ডার পায়।
সঠিক প্রাইসিং এবং প্যাকেজ সেট করা
শুরুতে আপনার মূল্য কিছুটা কম রাখুন। বেসিক (Basic), স্ট্যান্ডার্ড (Standard), এবং প্রিমিয়াম (Premium) – এই তিনটি প্যাকেজ তৈরি করুন, যাতে ক্লায়েন্টের বেছে নেওয়ার সুযোগ থাকে।
ধাপ ৪: প্রতিদিন ১০টি বায়ার রিকোয়েস্ট পাঠানোর সঠিক নিয়ম
নতুনদের জন্য কাজ পাওয়ার সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো বায়ার রিকোয়েস্ট (Buyer Request) পাঠানো। প্রতিদিন আপনি ১০টি রিকোয়েস্টে আবেদন করতে পারবেন। কিন্তু কপি-পেস্ট করা মেসেজ পাঠালে কোনো লাভ হবে না।
- ক্লায়েন্টের পোস্টটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।
- তার নাম উল্লেখ করে সম্বোধন করুন।
- আপনি তার কাজটি কীভাবে করে দেবেন, তা সংক্ষেপে লিখুন।
- আপনার পাঠানো প্রতিটি আবেদন যেন আলাদা এবং প্রাসঙ্গিক হয়।
ধাপ ৫: সোশ্যাল মিডিয়াতে আপনার গিগের প্রচার
শুধু ফাইভারের উপর বসে থাকলে চলবে না। আপনার গিগটি বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন। বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সারদের জন্য বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপে যোগ দিন এবং সেখানে আপনার কাজের নমুনা শেয়ার করুন। লিঙ্কডইনে একটি প্রফেশনাল প্রোফাইল তৈরি করে সেখানে আপনার ফাইভার গিগের লিঙ্ক যুক্ত করুন।
ধাপ ৬: অনলাইন থাকা এবং দ্রুত উত্তর দেওয়া
বায়াররা প্রায়শই “Online” ফিল্টার ব্যবহার করে সেলার খুঁজে থাকেন। তাই আপনি যত বেশি সময় অনলাইনে থাকবেন, আপনার গিগ তত বেশি দেখা যাবে। আপনার মোবাইলে ফাইভার অ্যাপটি ইনস্টল করে রাখুন এবং যেকোনো মেসেজের উত্তর যেন কয়েক মিনিটের মধ্যেই দিতে পারেন।
ধাপ ৭: ধৈর্য এবং পোর্টফোলিও তৈরি
মনে রাখবেন, প্রথম অর্ডার পেতে কয়েক দিন বা কয়েক সপ্তাহও সময় লেগে যেতে পারে। হতাশ হবেন না। এই সময়টাতে নতুন কিছু শেখার চেষ্টা করুন এবং আপনার দক্ষতা বাড়াতে থাকুন। প্রথম কয়েকটি কাজ পাওয়ার পর, ক্লায়েন্টকে সেরা সেবাটি দিন, যাতে আপনি একটি ৫-স্টার রিভিউ পান। কয়েকটি ভালো রিভিউ আপনার প্রোফাইলের চেহারা বদলে দেবে।
উপসংহার: ধৈর্য এবং চেষ্টার বিকল্প নেই
ফাইবারে সফলতা রাতারাতি আসে না। এটি ধারাবাহিক প্রচেষ্টা, শেখার মানসিকতা এবং ধৈর্যের ফল। উপরের ৭টি ধাপ যদি আপনি সঠিকভাবে এবং নিয়মিতভাবে অনুসরণ করেন, তবে আপনার প্রথম অর্ডার পাওয়া শুধু সময়ের ব্যাপার।
এখন আপনার পালা! ফাইভার নিয়ে আপনার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কোনটি বা কোন বিষয়টি আপনাকে সবচেয়ে বেশি ভাবাচ্ছে? নিচের কমেন্ট বক্সে আমাদের জানান।