জলাতঙ্ক হলে কত দিনে রোগ প্রকাশিত হয়? লক্ষণ ও বাঁচার উপায়

Last Updated on June 25, 2025 by বিডি কিক

জলাতঙ্ক বা র‍্যাবিস একটি মারাত্মক ভাইরাসজনিত রোগ, যা মূলত সংক্রামিত পশুর লালার মাধ্যমে ছড়ায়। এই রোগে একবার লক্ষণ প্রকাশ পেয়ে গেলে মৃত্যু প্রায় নিশ্চিত। তাই জলাতঙ্ক বিষয়ে সঠিক তথ্য জানা এবং সময়মতো প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলোর একটি হলো, জলাতঙ্ক হলে কত দিনে এর রোগ লক্ষণ প্রকাশিত হয়?

জলাতঙ্ক হলে রোগ প্রকাশিত হতে কতদিন সময় লাগে?

বিশেষজ্ঞদের মতে, জলাতঙ্কের ভাইরাস শরীরে প্রবেশের পর থেকে রোগের লক্ষণ প্রকাশ পেতে বা এর ইনকিউবেশন পিরিয়ড সাধারণত ২ থেকে ৩ মাস পর্যন্ত হয়ে থাকে। তবে, এই সময়কালটি নির্দিষ্ট নয় এবং বিভিন্ন বিষয়ের উপর নির্ভর করে এটি এক সপ্তাহ থেকে শুরু করে এক বছর বা তারও বেশি হতে পারে।

লক্ষণ প্রকাশের এই তারতম্যের পেছনে কয়েকটি কারণ রয়েছে:

  • কামড়ের স্থান: ভাইরাসটি মস্তিষ্ক থেকে যত দূরে প্রবেশ করে, লক্ষণ প্রকাশ পেতে তত বেশি সময় লাগে। উদাহরণস্বরূপ, পায়ে কামড়ানোর চেয়ে মুখে বা ঘাড়ে কামড়ালে ভাইরাস দ্রুত মস্তিষ্কে পৌঁছায় এবং রোগের লক্ষণ তাড়াতাড়ি দেখা দেয়।
  • ক্ষতের গভীরতা: কামড়ের ক্ষত যত গভীর হয়, ভাইরাস তত সহজে এবং বেশি পরিমাণে রক্তে প্রবেশ করে, ফলে লক্ষণ দ্রুত প্রকাশ পায়।
  • ভাইরাসের পরিমাণ: সংক্রামিত পশুর লালায় ভাইরাসের পরিমাণ বেশি থাকলে সংক্রমণের গতি দ্রুত হয়।
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা: আক্রান্ত ব্যক্তির বয়স এবং শারীরিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। শিশু এবং কম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে লক্ষণ দ্রুত প্রকাশ পেতে পারে।

জলাতঙ্কের লক্ষণসমূহ

জলাতঙ্কের লক্ষণগুলোকে দুটি প্রধান ভাগে ভাগ করা যায়: প্রাথমিক এবং গুরুতর।

প্রাথমিক লক্ষণ: এই লক্ষণগুলো অনেকটা সাধারণ ফ্লু-এর মতো হতে পারে, যা ২ থেকে ১০ দিন পর্যন্ত স্থায়ী হয়।

  • জ্বর ও মাথাব্যথা
  • শরীরে ব্যথা ও দুর্বলতা
  • ক্ষুধামন্দা এবং বমি বমি ভাব
  • কামড়ের স্থানের চারপাশে চুলকানি, জ্বালাপোড়া বা অসাড় অনুভূতি

গুরুতর লক্ষণ: ভাইরাস স্নায়ুতন্ত্রে ছড়িয়ে পড়লে নিম্নলিখিত গুরুতর লক্ষণগুলো প্রকাশ পায়:

  • পানিভীতি বা হাইড্রোফোবিয়া: এটি জলাতঙ্কের সবচেয়ে পরিচিত লক্ষণ। রোগী পানি দেখলেই প্রচণ্ড ভয় পায়, এমনকি পানি পানের চেষ্টায় গলার মাংসপেশিতে তীব্র সংকোচন ও ব্যথা হয়।
  • বায়ুভীতি বা এরোফোবিয়া: রোগী বাতাস বা ফ্যানের ঝাপটা সহ্য করতে পারে না।
  • অস্বাভাবিক আচরণ, অতিরিক্ত উত্তেজনা, হ্যালুসিনেশন এবং আগ্রাসী মনোভাব।
  • মুখ দিয়ে অতিরিক্ত লালা ঝরা।
  • শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ অবশ হয়ে যাওয়া বা পক্ষাঘাত।

একবার এই গুরুতর লক্ষণগুলো প্রকাশ পেলে রোগীকে বাঁচানো প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে এবং কয়েকদিনের মধ্যেই শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে রোগী মারা যায়।

কুকুর বা অন্য কোনো প্রাণী কামড়ালে তাৎক্ষণিক করণীয়

জলাতঙ্ক একটি প্রতিরোধযোগ্য রোগ। কুকুর, বিড়াল, শিয়াল, বেজি বা বাদুড়ের মতো কোনো প্রাণী কামড়ালে বা আঁচড় দিলে আতঙ্কিত না হয়ে, সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত।

১. ক্ষতস্থান ধৌতকরণ: কামড়ের স্থানটি সাথে সাথে চলমান পানি এবং সাবান দিয়ে কমপক্ষে ১৫ মিনিট ধরে ভালোভাবে পরিষ্কার করুন। এটি ভাইরাসের সংখ্যা কমাতে অত্যন্ত কার্যকর। ২. জীবাণুনাশক ব্যবহার: ক্ষতস্থান ধোয়ার পর পভিডোন-আয়োডিন, ডেটল বা অন্য কোনো অ্যান্টিসেপটিক দ্রবণ দিয়ে স্থানটি জীবাণুমুক্ত করুন। ৩. দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ: যত দ্রুত সম্ভব নিকটস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যোগাযোগ করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। ৪. টিকা গ্রহণ: চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী জলাতঙ্ক প্রতিরোধী টিকার (Post-Exposure Prophylaxis – PEP) সম্পূর্ণ কোর্স সম্পন্ন করুন। কামড়ের তীব্রতা এবং স্থান বিবেচনা করে চিকিৎসক প্রয়োজনে র‍্যাবিস ইমিউনোগ্লোবিউলিন (RIG) ইনজেকশন দেওয়ার পরামর্শও দিতে পারেন।

বিশেষ দ্রষ্টব্য: পোষা প্রাণীর আঁচড় বা কামড়কেও অবহেলা করা উচিত নয়। পোষা প্রাণীকে নিয়মিত জলাতঙ্কের টিকা দেওয়া এবং সন্দেহজনক বন্য প্রাণী থেকে দূরে থাকাই এই ভয়াবহ রোগ থেকে বাঁচার সর্বোত্তম উপায়। মনে রাখবেন, সচেতনতাই জলাতঙ্ক প্রতিরোধের মূল চাবিকাঠি।

Spread the love

Leave a Comment