ওয়ার্ডপ্রেস থিম ডেভেলপমেন্ট শেখার পূর্বে আমাদের অবশ্যই ওয়ার্ডপ্রেস ড্যাশবোর্ড সম্পর্কে যেমন পূর্ণাঙ্গ ধারনা থাকা উচিত, তেমন ওয়ার্ডপ্রেসের ব্যবহার করা বিভিন্ন কম্পোনেন্টের নামও আমাদের খুব ভালো করে জানা উচিত।
একই সাথে আমাদের জানতে হবে এই কম্পোনেন্টের ব্যবহার বা কাজ কি। এইগুলোই ওয়ার্ডপ্রেসের একেকটি ট্রাম। তাই আজ আমরা ওয়ার্ডপ্রেসের ট্রাম বা টার্মিনোলজি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
লুপ (LOOP)
ওয়ার্ডপ্রেসে বিভিন্ন পোস্ট টাইপ কন্টেন্ট তুলে নিয়ে আসার জন্য প্রোগ্রামিং এর মত আমাদের লুপ ব্যবহার করতে হয়। এইটাই লুপ।
স্লাগ (SLUG)
স্লাগ হচ্ছে ইউজার ফ্রেণ্ডলি ইউআরএল (User friendly URL)।
ইউজার বিভিন্ন এলিমেন্টের জন্য বিভিন্ন নিজস্ব ইউ আর এল (URL) বা লিংক তৈরি করে ব্যবহার করতে পারে, এটাকে স্লাগ বলে।
টেমপ্লেট (TEMPLATE)
ওয়ার্ডপ্রেসের বিভিন্ন কন্টেন্ট দেখানোর জন্য আমরা বিভিন্ন ওয়ার্ডপ্রেসের ফাইলগুলো ইউজ করি , যে পিএইচপি ফাইলগুলো তে কোড লিখি সেগুলোই ওয়ার্ডপ্রেসের টেমপ্লেট ।
টেমপ্লেট পার্ট (TEMPLATE PART)
একটা টেমপ্লেটকে যখন ছোট ছোট টুকরো করা হয় ভেঙে, সেই ছোট বা ভাঙ্গা টেমপ্লেটকে বলা হয় টেমপ্লেট পার্ট।
টেমপ্লেট ট্যাগ (TEMPLATE TAG)
ওয়ার্ডপ্রেসের কন্টেন্ট নিয়ে কাজ করে যে php ফাংশনগুলো, সেগুলোই টেমপ্লেট ট্যাগ।
কন্ডিশনাল ফাংশন গুলো ও একেক টি টেমপ্লেট ট্যাগ।
পেজ টেমপ্লেট (PAGE TEMPLATE)
ওয়ার্ডপ্রেস ফাংশন দিয়ে আপনি যদি কোন ফাইলকে পেজ আকারে শো করেন, সেই ফাইল কে তখন বলা হয় পেজ টেমপ্লেট।
টেমপ্লেট হায়ারার্কি (TEMPLATE HIERARCHY)
ওয়ার্ডপ্রেসে বিভিন্ন ধরনের কন্টেন্ট শো করার জন্য বিভিন্ন টেম্পলেট নিদিষ্ট করা আছে। এই নির্দিষ্ট কন্টেন্ট শো করানোর জন্য ওয়ার্ডপ্রেস সেই টেমপ্লেট খুজে, যেমন আমরা যখন সিঙ্গেল পোস্ট ভিউ করি এটা খুজে single-{post-type}-{slug}.php এটা না পেলে
এটা খুজে single-{post-type}.php
আবার এটা না পেলে single.php খুজে
এভাবে পর্যায়ক্রমে singular.php তারপর কিছুই না পেলে index.php খুজে ।
এখানে উদাহরন স্বরূপ পোস্ট এর জন্য সে এত গুলা টেমপ্লেট একের পর এক খুজছে, এখানে কোনটার পর কোনটা খুজবে, এটার একটা ক্রমানুসার বা অর্ডার আছে।
এটাই ওয়ার্ডপ্রেসের টেমপ্লেট হায়ারার্কি – (Template Hierarchy)।
এখান থেকে হায়ারার্কি সম্পর্কে আরো বিস্তারিত দেখে নিতে পারেন ওয়ার্ডপ্রেস হায়ারার্কি
অ্যাডমিন বার – টুলবার (ADMIN BAR – TOOLBAR)
ওয়ার্ডপ্রেসে অ্যাডমিন হিসাবে লগ-ইন থাকলে উপরে একটি বার শো করে, অনেকে টপ বার বলে।
এর প্রকৃত নাম অ্যাডমিন বার।
পোস্ট ফরম্যাট (POST FORMAT)
পোস্ট ফরম্যাট হচ্ছে একটা পোস্টকে শো করানোর জন্য ডিজাইন অনুসারে বিভিন্ন ফরম্যাট ফিক্সড করে দেওয়া। এই ফরম্যাট গুলো মোটামুটি ডিফল্টভাবে ৯টি রয়েছে। যেটা পোস্ট করার সময় রেডিও বাটনের ফিক্সড করে দেওয়া যায়।
পারমালিঙ্ক (PERMALINK)
পারমালিঙ্ক হচ্ছে কোন একটা পোস্টের পার্মানেন্ট লিঙ্ক বা পার্মানেন্ট ইউ আর এল (URL).
একটা পোস্ট কোন লিঙ্ক ফরম্যাট বা কোন ইউ আর এল (URL) স্টাকচারে এ দেখানো হবে সেটাই তার পারমালিঙ্ক ।
ট্যাক্সোনমি (TAXONOMY)
ক্যাটাগরি , ট্যাগ হচ্ছে ট্যাক্সোনমি । আমরা চাইলে নিজেরা নিজেদের প্রয়োজনে কাস্টম ট্যাক্সোনমি তৈরি করতে পারি।
যেসব ট্যাক্সোনমির মধ্যে প্যারেন্ট চাইল্ড টাইপ রিলেশন থাকে তারা ক্যাটাগরি টাইপ ট্যাক্সোনমি।
আর যেসব ট্যাক্সোনমির মধ্যে প্যারেন্ট চাইল্ড টাইপ রিলেশন থাকে না তারা ট্যাগ টাইপ ট্যাক্সোনমি।
টার্ম (TERM)
ট্যাক্সোনমি আন্ডারে যে ভ্যালু গুলো থাকে সেগুলোই টার্ম । যেমন – ক্যাটাগরি ট্যাক্সোনমির আন্ডারে যদি আপনি কোন ক্যাটাগরি অ্যাড করেন, সেইটাই একটা ট্রাম। এরকম প্রত্যেকটা ক্যাটাগরি-ই হবে এক একটি ট্রাম।
আর্কাইভ (ARCHIVE)
যেকোনো টাইপের পোস্ট এর সমষ্টি/কালেকশনকে বলা হয় সেই পোস্টের আর্কাইভ।
যেমন – অথোর(Author) আর্কাইভ হচ্ছে একজন অথোর(Author) এর সকল পোস্টের সমষ্টি, এরকম হতে পারে আমি যে পোস্ট গুলো এই ওয়েবসাইটে করেছি, সেগুলো আমার আর্কাইভ ।
সাইডবার (SIDEBAR)
ওয়ার্ডপ্রেসে উইজেট এরিয়াই সাইডবার।
শর্টকোড (SHORTCODE)
শর্টকোড হচ্ছে একটি ছোট কোড দিয়ে বড় একটি কন্টেন্ট কে কল করে শো করানো।
রোল অ্যান্ড ক্যাপাবিলিটি (ROLE AND CAPABILITY)
রিয়েল লাইফ উদাহরনে রোল কে বলা যেতে পারে বিভিন্ন চাকরির পদবি, যেমন – ম্যানেজার, সুপারভাইজার। আর ক্যাপাবিলিটি হল তার ক্ষমতা, যেমনঃ ম্যানেজার যা করতে পারবে, তাকে যতটা ক্ষমতা দেওয়া আছে, সুপারভাইজার এর তা নেই।
স্ক্রিন (SCREEN)
ওয়ার্ডপ্রেসের ড্যাশবোর্ডে প্রত্যেকটা পেজই একেকটা স্ক্রিন। প্রত্যেকটা পেজেই স্ক্রিন অপশন পাবেন।
টেক্সট ইডিটর (TEXT EDITOR)
পোস্ট করতে গেলে যে ইডিটর দেখা যায়, সেইটাই ট্রেক্সট ইডিটর।
কুইক ট্যাগ (QUICK TAG)
টেক্সট ইডিটরের যে বাটন গুলো সেগুলোই কুইক ট্যাগ ।
ট্রান্সিয়েন্ট (TRANSIENT)
ওয়ার্ডপ্রেসের টেম্পোরারি স্টোরেজ সিস্টেম। একটা এক্সপায়ার টাইম সেট করে আপনি ডেটাবেজে ডাটা স্টোর করতে পারবেন ট্রান্সিয়েন্ট এপিআই(API) ব্যবহার করে।
হুক (HOOKS)
হুক হচ্ছে ওয়ার্ডপ্রেসের নিজস্ব ইভেন্ট ব্রডকাস্টিং সিস্টেম। আমরা যদি এমন কিছু চাই, যে একটা নির্দিষ্ট কিছু হওয়ার পর বা হওয়ার আগে একটা স্পেসিফিক কাজ হবে, সেইটা হুক দিয়ে করতে হবে।
হুক ২ টাইপ – একশন হুক, ফিল্টার হুক।
একশন হুক (ACTION HOOKS)
নির্দিষ্ট কিছু হওয়ার পর একটা ফাংশন কাজ করবে,বা কিছু কাজ হবে, এমন কিছু চাইলে সেই কাজ করা হয় একশন হুক দিয়ে ।
একশন হুকের উদাহরন, যেমন – থিম সেটাপের হয়তো কিছু কাজ হবে, এটার জন্য after_setup_theme একশন হুক ব্যবহার করা হয়।
ফিল্টার হুক (FILTER HOOKS)
কিছু হওয়ার পূর্বে কোন একটা কাজ হবে, এরকম কিছু চাইলে সেই কাজ ফিল্টার হুক দিয়ে করা হয়।
উদাহরন – wp_delete_file একটি ফিল্টার হুক, যেটি ওয়ার্ডপ্রেস থেকে কোন ফাইল ডিলেট করার পূর্বে কাজ করে।
এক্সসার্প্ট (EXCERPT)
এক্সসার্প্ট হচ্ছে একটি পোস্টের টিজার টেক্সট। পোস্ট এর প্রিভিউ মুডের জন্য আপনি যদি অল্প কিছু টেক্সট ডিক্লেয়ার করে দিতে চান, তাহলে আপনাকে এক্সসার্প্ট ব্যবহার করতে হবে।
মিডিয়া (MEDIA)
ওয়ার্ডপ্রেসে এটাচমেন্ট(Attachment) ফাইল গুলোকে মিডিয়া ফাইল বলা হয়।
ফাংশন টাইপ (FUNCTION TYPE)
ওয়ার্ডপ্রেসে দুই ধরনের ফাংশন মেইনলি ইউজ করা হয়, একটা টাইপ রিটার্ন করে, আরেকটি টাইপ ইকো (echo) করে বা প্রিন্ট করে।
রিটার্ন টাইপ ফাংশনের উদাহরণ – get_bloginfo() । এই ফাংশনটির মধ্যে প্যরামিটার পাস করার মাধ্যমে বিভিন্ন ভ্যালু রিটার্ন করে ব্যবহার করা হয়। এটার ভ্যালু যদি আপনি সরাসরি প্রিন্ট করতে চান অবশ্যই আপনাকে ইকো (echo) ব্যবহার করতে হবে।
অন্যদিকে,
ইকো টাইপ ফাংশনের উদাহরণ – bloginfo()। এই ফাংশনটির থেকে সরাসরি আউটপুট পাওয়া যায়। শুধু প্যারামিটার পাস, আর আপনি যদি ফাংশনটিকে কল করেন তাহলেই এই ফাংশন আপনাকে আউটপুট শো করবে।
ওয়ার্ডপ্রেসে মোটামুটি সব ফাংশনের-ই এই দুই টাইপ অ্যাভেইলেবল, রিটার্ন গুলো get দিয়ে শুরু হয়ে থাকে, অন্যদিকে ইকো (echo) টাইপের পূর্বে get ওয়ার্ডটি থাকে না।
মোটামুটি এই ছিল আজ, কারো কোন প্রশ্ন থাকলে বা কেউ নতুন কিছু শিখলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন।
ধন্যবাদ সবাইকে ❤️
শুভ কামনা আপনার জন্য
লেখা
সুজন কুমার দে
ওয়ার্ডপ্রেস ডেভেলপার
টপ রেটেড ফ্রিল্যান্সার (আপওয়ার্ক)