Skip to content
Home » ফ্রিল্যান্সিং এর ভবিষ্যৎ কি

ফ্রিল্যান্সিং এর ভবিষ্যৎ কি

ফ্রিল্যান্সিং এর ভবিষ্যৎ কি

একদিকে টেকনোলোজির কারনে যেমন কিছু মানুষ চাকরি হারাচ্ছে, ঠিক তার বিপরীত দিকে টেকনোলোজির মাধ্যমেই অনেকে ফ্রিল্যান্সিং করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। তবে ফ্রিল্যান্সিং এ এত সাফল্য দেখা গেলেও ফ্রিল্যান্সিং এর ভবিষ্যৎ নিয়ে অনেকেই চিন্তিত। আসলেই ফ্রিল্যান্সিং এর ভবিষ্যৎ কি? ফ্রিল্যান্সিং এর ভবিষ্যৎ কি ভাল ? নাকি ফ্রিল্যান্সিং এর ভবিষ্যৎ অন্ধকার ? চলুন আজকে এই নিয়ে বিস্তারিত জানবো।

ফ্রিল্যান্সিং এর কাজ কি

ফ্রিল্যান্সিং এর ভবিষ্যৎ নিয়ে রিসার্চ করতে গেলে আমাদের প্রথমে বোঝা দরকার ফ্রিল্যাসিং কি, এবং ফ্রিল্যান্সিং এর কাজ কি। ফ্রিল্যান্সিং বলতে আসলে বোঝায় স্বাধীনভাবে কাজ করা, কিন্তু স্বাধীনভাবে যেকোনো কাজ করলেই সেটাকে ফ্রিল্যান্সিং বলা যাবে, বিষয়টা এমন না। প্রযুক্তির এই যুগে দক্ষতা ভিত্তিক বিভিন্ন কাজ যখন অনলাইনে সার্ভিস কিংবা প্রোজেক্ট আকারে নির্দিষ্ট একটা পারিশ্রমিকের বিপরীতে করে দেওয়া হয়, তাকে ফ্রিল্যান্সিং বলা হয়ে থাকে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ফ্রিল্যান্সিং এর কাজ গুলো সম্পূর্ণ ভাবে রিমোটলি করা হয়, কিন্তু অফলাইনে কোন কাজ স্বাধীনভাবে করা গেলে যে তাকে ফ্রিল্যান্সিং বলা যাবেনা, বিষয়টা এমন না, একেও ফ্রিল্যান্সিং বলা যাবে। তবে এখানে আমরা অনলাইন ভিত্তিক ফ্রিল্যান্সিং কাজের কথা নিয়েই আলোচনা করবো।

ফ্রিল্যান্সিং এর বর্তমান অবস্থা

ফ্রিল্যান্সিং এর ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা করতে গেলে আমাদের ফ্রিল্যান্সিং এর বর্তমান অবস্থার দিকে তাকাতে হবে। ফ্রিল্যান্সিং এর বর্তমান অবস্থা কি? এটা কি ভাল ? উত্তর হচ্ছে ফ্রিল্যান্সিং অবস্থা শুধু ভাল নয়, ফ্রিল্যান্সিং এর বর্তমান অবস্থা খুবি ভালো এবং সম্ভবনাময়। বর্তমানে প্রায় ১.৫৭ বিলিয়ন পরিমান ফ্রিল্যান্সার ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটে কাজ করছে, যার ইকোনমিক ভ্যালু প্রায় ১.৫ ট্রিলিয়ন ডলার। এই ইকোনমিক ভ্যালুই প্রমান করে ফ্রিল্যান্সিং এর বর্তমান অবস্থা খুবি ভালো, সম্ভাবনাময় এবং ভবিষ্যতে আরো ভালো করবে এই ফ্রিল্যান্সিং। আর ইকোনোমিক গ্রোথ এর ক্ষেত্রে এই ফ্রিল্যান্সিং গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করছে সরাসরি, কারন দেশে যে রেমিটেন্স আসছে, তার বিশাল একটি অংশ ফ্রিল্যান্সিং থেকেই আসে।

ফ্রিল্যান্সিং এর ভবিষ্যৎ কি

সহজ ভাষায় বলতে গেলে, ফ্রিল্যান্সিং এর ভবিষ্যৎ অনেক সম্ভবনাময়। ফ্রিলান্সিং এর বর্তমান অবস্থা যেমন উজ্জল, ঠিক একই ভাবে আগামী দিন গুলোতে ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার আরও নতুন নতুন সম্ভবনা তৈরি করবে। এখন মনে প্রশ্ন আসতে পারে, কিভাবে ফ্রিল্যান্সিং এর ভবিষ্যৎ কিভাবে ভাল? মার্কেট রিসার্চ রিপোর্টস & কনসাল্টিং প্রতিষ্ঠান Grand View Research এর তথ্য মতে ২০২০ সালে গ্লোবালি ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটের ইকোনোমিক ভ্যালু ছিল ১.২ ট্রিলিয়ন ডলার, কিন্তু ২০২৮ সাল নাগাদ এই ভ্যালু হবে প্রায় ৩.৫ ট্রিলিয়ন ডলার, আবার ২০৩০ নাগাদ এই মার্কেট ভ্যালু ৫.১ ট্রিলিয়ন ডলার অতিক্রম করবে। এই তথ্য থেকে সহজেই বোঝা যায়, দিন দিন ফ্রিল্যান্সারদের চাহিদা কতটা বাড়বে। আপনি এই প্রেডিকশন দেখে নিশ্চয় প্রশ্ন তুলতে পারেন, কেন এত ভ্যালু বাড়ছে ফ্রিল্যান্সারদের। চলুন এটার উত্তর খোজা যাক।

ফ্রিল্যান্সিং এর সুবিধা

ফ্রিল্যান্সিং এর মার্কেট ভ্যালু বাড়ার প্রধান কারন হচ্ছে ফ্রিল্যান্সিং এ প্রচুর সুবিধা রয়েছে। একজন ফ্রিল্যান্সার যেমন এই সুবিধাগুলো পেয়ে থাকেন, ঠিক একইভাবে ফ্রিল্যান্সারদেরকে যে হায়ার করে অর্থাৎ বায়ার, তারাও এই সুবিধা গুলো পায়। ফ্রিল্যান্সিং এর সুবিধা গুলো কি কি ? চলুন দেখা যাকঃ

একজন ফ্রিল্যান্সার নিচের সুবিধাগুলো পেয়ে থাকেঃ

ভাল ইনকাম

ফ্রিল্যান্সাররা ট্রেডিশনাল জব এর তুলনায় অনেক বেশি ইনকাম করে থাকে। যেহুতু তারা বৈদেশিক মুদ্রা যেমন ডলার কারেন্সি তে কাজ করেন, তাই সল্প মুল্যে কাজ করলেও নিজ দেশের কারেন্সিতে ফ্রিল্যান্সাররা একটা ভাল এমাউন্ট পায়।

স্বাধীনতা

ফ্রিল্যান্সাররা স্বাধীন ভাবে কাজ করতে পারে, কোন কাজ সে নিবে, কোনটা নিবেনা এগুলো একজন ফ্রিল্যান্সার নিজেই ডিসিশন নিতে পারে। এছাড়া ফ্রিল্যান্স প্রোজেক্ট ডেলিভারির নির্দিষ্ট টাইমলাইন থাকলেও ফ্রিল্যান্সাররা তার সুবিধামত সময়ে কাজটি করার সুযোগ পায়। আবার অনলাইন ভিত্তিক কাজ গুলোর জন্য কেবল ইন্টারনেট আর কম্পিউটার থাকলেই যে কোন ফ্রিল্যান্স কাজ করা সম্ভব এবং, যেকোনো লোকেশন থেকে এটা করা যায়। তাই ফ্রিল্যান্সিং একটি স্বাধীন পেশা, ফ্রিল্যান্সাররা অনেকটাই স্বাধীন।

পরিবারকে সময় দেয়া

একজন ফ্রিল্যান্সার যেহেতু বাসা থেকেই তার সকল কাজ করতে পারে, তাই সে খুব সহজেই তার পরিবারকে সময় দিতে পারে। কিন্তু প্রচলিত জব গুলোতে নিয়মিত অফিস এবং অন্যান্য কাজের পাশাপাশি পরিবারকে সময় দেয়া খুবই কঠিন। তাই ফ্রিল্যান্সাররা পরিবারকে সময় দেয়ার সুবিধা পায়।

স্কিল ডেভলপমেন্ট

একজন ফ্রিল্যান্সার তার নিয়মিত কাজ করার পাশাপাশি নিজের স্কিল ডেভলপমেন্টের জন্য পর্যাপ্ত সময় পেয়ে থাকে, তাই সে খুব সহজেই নিজের স্কিল ডেভলপমেন্ট করতে পারে, এবং ফ্রিল্যান্সিং এ ভালো কিছু করার জন্য নিয়মিত স্কিল ডেভলপমেন্ট খুবই জরুরি । এই স্কিল ডেভলপমেন্ট তাকে যেমন নতুন কাজ পেতে সহায়তা করে, একইভাবে এটি নতুন নতুন OPPORTUNITIES ও তৈরি করে।

সময়

ফ্রিল্যান্সাররা যেহেতু ঘরে বসে কাজ করে, তাই তাদের সময় নষ্ট হয়না। কারন আজকাল বাইরে অফিস করতে যাওয়া, জ্যামে পরে থাকা ইত্যাদি বিষয় গুলোর জন্য প্রচুর সময় নষ্ট হয়, যেটা একজন ফ্রিল্যান্সার কাজে লাগাতে পারে।

ছুটি/ঘুরতে যাওয়াঃ ফ্রিল্যান্সাররা স্বাধীন, তারাই তাদের বস। তাই ছুটি কিংবা ঘুরতে যাওয়ার জন্য ফ্রিল্যান্সারদের কারোর অনুমতির প্রয়োজন পরে না, তারা নিজের কাজের প্রেসার এর উপর ডিপেন্ড করে ডিসিশন নিয়ে নিজেই যখন তখন ঘুরতে যেতে পারেন, ছুটি নিতে পারেন।

একজন বায়ার/ক্লায়েন(যিনি ফ্রিল্যান্সার হায়ার করে থাকেন) নিচের সুবিধাগুলো পেয়ে থাকেঃ

কোয়ালিটি(QUALITY) কাজ

সাধারনত ফ্রিল্যান্সাররা কোন একটি স্পেসিফিক বা নির্দিষ্ট স্কিলে দক্ষ হয়ে থাকেন।  নির্দিষ্ট বিষয়ে দক্ষতা থাকার কারনে একজন ফ্রিল্যান্সার সেই নির্দিষ্ট স্কিলে অনেক অভিজ্ঞ হন, যার ফলে সে কোয়ালিটি কাজ প্রভাইড করতে পারে।

সাশ্রয়ী(COST EFFECTIVE) মুল্য

একজন ফ্রিল্যান্সার দিয়ে তুলনামুলক কম প্রাইসে কাজ করানো যায়। যেমন আমেরিকার একজন ওয়েব ডেভলপার একটি ওয়েবসাইট ডেভলপ করতে যত টাকা নিবেন, তার তুলনায় বাংলাদেশি একজন মানুষ খুবি কম টাকা নেবেন। এর ফলে ক্লায়েন্ট খুব সাশ্রয়ী মুল্যে কাজ পায় ফ্রিল্যান্স প্রোজেক্ট এ।

সময়

ফ্রিল্যান্সারদের কাজ দিতে যেহেতু খুব বেশি ঝামেলা পোহাতে হয়না, খুব সহজেই মেসেজ/ইমেইলে একজনকে কাজ বুঝিয়ে দেওয়া যায়, এবং কাজ পাওয়া ও যায় ইমেইল/মেসেজেই, তাই ফ্রিল্যান্সারদের কাজ দিতে প্রচুর সময় নষ্ট হয়না, ফিজিক্যালি কোথাও যেতে হয়না, সবকিছু ম্যানেজ করা খুব সহজ হয়।

পরিশেষে বলা যায় যে, ফ্রিল্যান্সিং এর ভবিষ্যৎ ভালো, এখানে ভালো কিছু করার যথেষ্ট সুযোগ আছে। তাই ডেডিকেশন নিয়ে কাজ করুন, ফ্রিল্যান্সার হয়ে বেকারমুক্ত দেশ করুন।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *