মানুষের শরীরে রেবিস ভ্যাকসিন এর কার্যকারিতা কতদিন থাকে

Last Updated on July 4, 2025 by বিডি কিক

পশুর কামড় বা আঁচড়ের পর যে আতঙ্কটি আমাদের সবচেয়ে বেশি তাড়া করে, তা হলো জলাতঙ্ক বা রেবিস। এটি একটি মারাত্মক রোগ, তবে সুখবর হলো সঠিক সময়ে ভ্যাকসিন বা টিকা গ্রহণের মাধ্যমে এটি শতভাগ প্রতিরোধযোগ্য। যারা রেবিস ভ্যাকসিন নিয়েছেন বা নেওয়ার কথা ভাবছেন, তাদের মনে একটি সাধারণ প্রশ্ন ঘুরপাক খায় – “মানুষের শরীরে রেবিস ভ্যাকসিন এর কার্যকারিতা কতদিন থাকে?”

এই প্রশ্নের উত্তরটি সোজাসাপ্টা নয়, কারণ এর কার্যকারিতা নির্ভর করে বিভিন্ন পরিস্থিতির উপর। এই আর্টিকেলে আমরা রেবিস টিকার কার্যকারিতা, মেয়াদ এবং বুস্টার ডোজ সম্পর্কে সকল গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সহজভাবে আলোচনা করব।

রেবিস (জলাতঙ্ক) ভ্যাকসিন কীভাবে কাজ করে?

রেবিস ভ্যাকসিন আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে জলাতঙ্ক ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য প্রস্তুত করে। এটি শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি করতে উৎসাহিত করে, যা ভাইরাসটিকে স্নায়ুতন্ত্রে পৌঁছানোর আগেই নিষ্ক্রিয় করে দেয়।

এখন মূল প্রশ্নে আসা যাক। ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা মূলত দুটি প্রধান পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে।

১. কামড় বা আঁচড়ের পরে নেওয়া ভ্যাকসিন (Post-Exposure Prophylaxis – PEP)

এটি সবচেয়ে সাধারণ ক্ষেত্র। কোনো সন্দেহভাজন প্রাণী কামড়ানোর পর সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য যে পূর্ণ কোর্সটি সম্পন্ন করা হয়, তাকে PEP বলে।

  • তাৎক্ষণিক সুরক্ষা: এই কোর্সের মূল উদ্দেশ্য হলো ওই নির্দিষ্ট কামড়ের সংক্রমণ থেকে আপনাকে বাঁচানো। একটি সম্পূর্ণ PEP কোর্স (সাধারণত ০, ৩, ৭, ১৪ ও ২৮ দিনে মোট ৫টি ডোজ) শেষ করার পর আপনার শরীর ওই যাত্রার জন্য সম্পূর্ণ সুরক্ষিত হয়ে যায়।
  • দীর্ঘমেয়াদী কার্যকারিতা কতদিন: একবার এই পূর্ণ কোর্সটি শেষ হলে আপনার শরীর জলাতঙ্ক ভাইরাসকে “চিনে ফেলে” এবং একটি মেমোরি তৈরি করে। এর মানে হলো, ভবিষ্যতে যদি আপনাকে আবার কোনো প্রাণী কামড় বা আঁচড় দেয়, তবে আপনাকে পুনরায় পূর্ণ কোর্স নিতে হবে না।
    • করণীয়: সেক্ষেত্রে সাধারণত মাত্র দুটি বুস্টার ডোজ (ঘটনার দিন এবং তার ৩ দিন পর) নিলেই যথেষ্ট। আপনার শরীর এই বুস্টার ডোজ পেয়েই খুব দ্রুত পর্যাপ্ত পরিমাণে অ্যান্টিবডি তৈরি করে ফেলে। এই মেমোরি বা স্মৃতি সাধারণত বহু বছর স্থায়ী হয়।

২. ঝুঁকির কারণে আগে থেকে নেওয়া ভ্যাকসিন (Pre-Exposure Prophylaxis – PrEP)

যারা পেশাগতভাবে পশুপাখির সংস্পর্শে আসেন (যেমন: পশু চিকিৎসক, বন বিভাগের কর্মী, অ্যানিমেল হ্যান্ডলার), তাদের সুরক্ষার জন্য আগে থেকেই এই টিকা দেওয়া হয়।

  • আগাম সুরক্ষা: এই কোর্সের (সাধারণত ০, ৭ ও ২১ বা ২৮ দিনে মোট ৩টি ডোজ) উদ্দেশ্য হলো শরীরে আগে থেকেই একটি বেসলাইন ইমিউনিটি তৈরি করে রাখা।
  • কার্যকারিতা কতদিন: PrEP নেওয়ার পর এই সুরক্ষা সাধারণত ১ থেকে ৩ বছর বা তার বেশি সময় পর্যন্ত কার্যকর থাকে। তবে যারা নিয়মিত উচ্চ ঝুঁকিতে কাজ করেন, তাদের জন্য নির্দিষ্ট সময় পরপর অ্যান্টিবডি টাইটার পরীক্ষা করে বা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী একটি বুস্টার ডোজ নেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে।

এক নজরে রেবিস ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা

পরিস্থিতিমূল উদ্দেশ্যকার্যকারিতা ও মেয়াদ
কামড়ের পরে (PEP)তাৎক্ষণিক জীবন রক্ষা করা।বর্তমান সংক্রমণের জন্য ১০০% কার্যকর। ভবিষ্যতে পুনরায় কামড়ালে শুধু বুস্টার ডোজ প্রয়োজন।
ঝুঁকির কারণে আগে (PrEP)আগাম সুরক্ষা তৈরি করা।১-৩ বছর বা তার বেশি। ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় থাকলে নিয়মিত বুস্টার ডোজ লাগতে পারে।

জরুরি বিজ্ঞপ্তি এবং চিকিৎসকের পরামর্শ

এই আর্টিকেলটি শুধুমাত্র সাধারণ তথ্যের জন্য। যেকোনো ধরনের পশুর আঁচড় বা কামড়ের ঘটনাকে হালকাভাবে নেবেন না।

  • অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন: ঘটনার পর যত দ্রুত সম্ভব কাছের হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যান।
  • কোর্স সম্পন্ন করুন: চিকিৎসক যে টিকার কোর্স দেবেন, সেটি অবশ্যই নির্দিষ্ট সময়ে সম্পন্ন করুন। কোনো ডোজ মিস করবেন না।
  • নিজের চিকিৎসা নিজে নয়: ইন্টারনেট বা অন্যের কথায় বিশ্বাস করে চিকিৎসা থেকে বিরত থাকবেন না। আপনার পরিস্থিতি অনুযায়ী একমাত্র চিকিৎসকই সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।

শেষ কথা: সুতরাং, “রেবিস ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা কতদিন থাকে?” – এর সহজ উত্তর হলো, এটি আজীবন আপনার শরীরকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য একটি “প্রতিরক্ষা স্মৃতি” তৈরি করে। পূর্ণ কোর্স করার পর আপনি ওই ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য আজীবন প্রস্তুত থাকেন, শুধু পুনরায় ঝুঁকির সম্মুখীন হলে একটি বুস্টার ডোজের মাধ্যমে সেই স্মৃতিকে জাগিয়ে তুলতে হয়।

Spread the love

Leave a Comment