নারীর রুপ আর লাবন্যের বর্ণনায় যার কথা না বললেই নয় তা হল ঘন কালো চুল। কিন্তু চুলের সৌন্দর্য বজায় রাখতে কিছু পরিচর্যার ও প্রয়োজন বটে। আর এই গরমে পরিচর্যার মাত্রা যেন আরও এক ধাপ এগিয়ে যায়। গরমে চুল পড়া বেড়ে গেলে প্রশ্ন জাগে চুল পড়া বন্ধ করার উপায় কি? চুলের রুক্ষতা ও ঝরে পড়াকে চুলের প্রধান ২টি সমস্যা হিসাবে ধরা যেতে পারে। তাই চুলের ঝরে পড়া রোধে করনীয় কি কি তা জেনে নেই!
চুল পড়া রোধে ১০টি টিপসঃ
(১) শাক সবজি ও মৌসুমি ফল
প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় থাকা চাই প্রচুর পরিমান শাক সবজি ও মৌসুমি ফল। আমিষের মধ্যে দুধ, ডিম আর মাছ তো থাকছেই। এগুলো আপনার শরীর ও মনের পাশাপাশি চুলের ও শক্তি যোগায়।
(২) ঘুম ও মেডিটেশন
ঘুম হতে হবে পর্যাপ্ত পরিমানের। এছাড়া চুল পড়ে যাওয়া রোধে মেডিটেশনো করা যেতে পারে। সত্যি বলতে মেডিটেশনকে এক কথায় দারুন এক নাচ্যারাল রিলিফ বলতে পারেন। মেডিটেশনটা অনেকখনের হয় না।হতে পারে সেটা ৩০ মিঃ হতে পারে সেটা ১ ঘন্টার কিন্তু সেই নির্দিষ্ট সময় টুকু ইনার পিস নিয়ে নিশ্চুপ থেকে মাইন্ড ও ব্রেইনের প্রেসার ডিক্রিজ করা,মানসিক ভাবে এক অদ্ভুত শান্তি এনে দেয়। আর বিভিন্ন গবেষণায় ও পাওয়া গেছে পর্যাপ্ত ঘুম আর মেডিটেশন চুল পড়া কমিয়ে দেয়।
(৩) শ্যাম্পুর ব্যবহার
চুল পড়া রোধে সপ্তাহে অন্তত ৩ দিন শ্যাম্পু করতে হবে। তবে শ্যাম্পু করার আগে অন্তত তেল দিয়ে ১ ঘন্টার মতো অপেক্ষা করতে হবে। তা না হলে চুল রুক্ষ হয়ে যাবে। আর বাইরে ধুলাবালিতে যদি অনেকটা সময় থাকা হয় তাই শ্যাম্পুর একটু বেশি ব্যবহার করতেই হয়। আর হ্যা শ্যাম্পু ব্যবহারের পর কনডিশনার ব্যবহার করতে ভুলবেন না।
(৪) হট অয়েল ম্যাসাজ
সপ্তাহে একদিন হট অয়েল ম্যাসাজ করুন। তার সাথে লেবুর রস দিতে পারলে আরো ভাল হবে। দেখবেন আপনার চুল পড়া অনেকাংশে কমে যাবে। আর রিলাক্সেশন তো হবেই, আর ব্লাড সারকুলেশন টাও ঠিক থাকবে। চুলের গোড়াও মজবুত হবে।
(৫) চুল পড়া রোধে শ্যাম্পু
শ্যাম্পুর ব্যবহারের পরের ধাপে চুল ভালমত ধুয়ে নিতে হবে যাতে চুলের গুড়ায় শ্যাম্পু থেকে না যায়। শ্যাম্পুর ব্যবহারের পর কনডিশনার এমন ভাবে ব্যবহার করতে হবে যাতে চুলের গোঁড়ায় না যায়। খুশকি দূর করার উপায় হিসেবেও শ্যাম্পুর ব্যবহার কার্যকরী।
(৬) তোয়ালের সঠিক ব্যবহার
অনেকেই চুল মুছার সময় অনেক চাপ প্রয়োগ করে মুছে থাকে। এতে বার বার ঘর্ষনের ফলে চুল তার সুস্থতা হারিয়ে ফেলে। ফলে গোড়া থেকে ভেংগে যাওয়ার আশংকা থাকে।
তাই চুল মোছার সময় যতটা সম্ভব আলতভাবে তোয়ালে ব্যবহার করা উচিত।
(৭) ব্লো ডাই
ঘন ঘন ব্লো ডাই করা থেকে বিরত থাকুন। না হলে ফলাফল যা হবে- চুল এক পর্যায়ে গিয়ে অনেক বেশি রুক্ষ ও প্রানহীন হয়ে যাবে। এবং সাথে সাথে কি হবে জানেন তহ! চুল রুক্ষ হউয়ার পাশাপাশি পাগলের মত চুল ঝরে পড়া শুরু হবে।
(৮) অতিরিক্ত হেয়ার প্রডাক্ট নয়
চুলে অতিরিক্ত হেয়ার প্রডাক্ট কখনই ব্যবহার করা উচিত নয়। এতে চুলের বৃদ্ধি ও সৌন্দর্য ব্যহত হয়।
(৯) ঘরে বানানো তেল
এছাড়াও ঘরোয়া পরিবেশে নিজেই তেল বানিয়ে নিতে পারেন। শুকনো আমলকি, হরিতকি, বহেরা ও মেথির গুনাগুন আমরা সকলেই জানি। শুকনো আমলকি, হরিতকি, বহেরা ও মেথি গুরা করে নারিকেল তেল বা অলিভ অয়েল তেল এর সাথে মিশিয়ে নিতে হবে। তেলের মিশ্রণটি একটি কাচের বোতল এ রেখে তা এক সপ্তাহ রোদে দিতে হবে। এরপর প্রতি সপ্তাহে একদিন বা দুইদিন রাতে তেলটি ভালো মত ম্যাসাজ করে সকালে শ্যাম্পু করে ফেলতে হবে। যদি ত্বক তৈলাক্ত হয় বা ব্রনের সমস্যা থাকে তবে রাতে তেল না দেওয়াই ভাল। তেল মাথায় দিয়ে এক ঘন্টা রেখে শ্যাম্পু করে ফেলুন। এতেও উপকার পাওয়া যাবে।
আমলকি, হরিতকি, বহেরা চুল পড়া রোধে এবং মেথি চুলের কোমলতা বজায় রাখে। এই মিশ্রণটি একবার বানিয়ে ৬ মাস অবধি সংরক্ষন করা যায়।
(১০) স্বাস্থ্যকর খাবার
আপনার স্বাস্থ্য আপনার চুলে প্রতিফলিত হয়। আপনি স্বাস্থ্যকর থাকলে সুন্দর থাকবে আপনার চুল। তাই চুলের যত্নে স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া আব্যশক।
তাই আপনার চুলের বৃদ্ধি ও স্বাস্থ্যের জন্যে ভিটামিন, লৌহ, ও প্রোটিন জাতীয় খাবার খেতে হবে।
বেশি বেশি প্রোটিন জাতীয় শাক-সবজি চুল ভালো রাখতে সহায়তা করে। এছাড়াও প্রচুর পরিমানে পানি পান করুন।
চুল ছোট বা যেমনি হোক না কেনো তার যত্নে কোন কমতি রাখা যাবেনা। সুন্দর চুলের জন্যে দামি লাইফস্টাইলেই বা প্রডাক্টস ব্যবহারের প্রয়োজন নেই। শুধু প্রয়োজন সঠিক পরিচর্যার আর প্রয়োজন সঠিক পুষ্ঠির। তবেই চুল হয়ে উঠবে ঝলমলে আর আকর্ষণীয়।
চুলের যত্ন নিন, ভালো থাকুন ।
Pingback: খুশকি দূর করার উপায় (প্রমাণিত ও কার্যকারী) - বিডি কিক