প্রায় সব রকম রান্নায় রসুনের ব্যবহার রান্নার স্বাদ কে বাড়িয়ে দেয়। রান্নায় স্বাদ বাড়ানোর ক্ষেত্রে এর যেমন জুরি নেই, তেমনি রসুনের উপকারিতা ও জুরি নেই। এমনকি প্রাচীনকালে এবং এখনো বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় রসুন ব্যবহার করা হয়।
নিয়মিত রসুন খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এছাড়া রসুনে থাকা বিভিন্ন ভিটামিন শরীরের পুষ্টির ঘাটতি ও পুরন করতে সহায়ক ভুমিকা পালন করে। রসুন রান্না করে কিংবা কাঁচা এই দুই অবস্থাতেই খাওয়া যায়। কাঁচা এবং রান্না করে খাওয়ার মধ্যে এর উপকারিতার ও কিছু তারতম্য হয়। চলুন রসুন সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেয়া যাকঃ
রসুন
রসুনের বৈজ্ঞানিক নাম অ্যালিয়াম স্যাটিভাম (Allium Sativum)। ইংরেজি তে রসুন কে বলা হয় Garlic (গার্লিক)। সাধারনত রসুন উৎপাদনকারি দেশ হিসেবে চীন, ভারত, বাংলাদেশ, মিশর, স্পেন বেশি পরিচিত। মসলা হিসেবে রসুন বেশি ব্যবহার করা হয় এবং এর প্রচুর মানবদেহের জন্য প্রচুর পুষ্টি গুনাগুন রয়েছে।
রসুনের গুনাগুন
রসুনের গুনাগুন যেকোনো সবজির তুলনায় অতুলনীয়। কারন রসুনে যেসব উপাদান থাকে তা খুব সহজে পাওয়া যায় না অন্য সবজি গুলোতে।
রসুনে থাকা পুষ্টি উপাদান সমুহের নাম –
রসুনের গুনাগুন (প্রতি ১০০ গ্রামে) |
শক্তি |
শর্করা |
প্রোটিন |
থায়ামিন (বি১) |
রাইবোফ্লেভিন (বি২) |
নায়াসিন (বি৩) |
প্যানটোথেনিক অ্যাসিড (বি৫) |
ভিটামিন বি৬ |
ফোলেট (বি৯) |
ভিটামিন সি |
ক্যালসিয়াম |
লৌহ |
ম্যাগনেসিয়াম |
ম্যাঙ্গানিজ |
ফসফরাস |
পটাসিয়াম |
সোডিয়াম |
জিংক |
সেলেনিয়াম |
*all value are approximate
রসুন খাওয়ার উপকারিতা
উপরে আমরা রসুনের মধ্যে থাকা উপাদান গুলো দেখেছি। এগুলো যে মানবদেহের জন্য কতটা দরকারি তা হয়তো আমরা সবাই জানি। এছাড়াও রসুন খাওয়ার উপকারিতা হিসেবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি, ক্যান্সার প্রতিরোধ করা, সেল ড্যামেজ রোধ করা ইত্যাদি অনেক উপকার রয়েছে। চলুন জেনে নেই –
কৃমি নাশক
রসুন কৃমিনাশক হিসেবে কাজ করে। তাই যাদের কৃমি সংক্রান্ত সমস্যা রয়েছে তাদের নিয়মিত রসুন খাওয়া উচিত।
ক্যান্সার প্রতিরোধে
রসুন ক্যান্সার প্রতিরোধে বড় ভুমিকা পালন করে। রসুনে থাকা সেলেনিয়াম ক্যানসার প্রতিরোধে কাজ করে।
কোলেস্টেরল কমায়
রক্তে থাকা কোলেস্টেরল কমাতে রসুন সহায়তা করে। যাদের কোলেস্টেরল বেশি, তারা নিয়মিত রসুন খেলে কোলেস্টেরল সমস্যার সুফল পাবেন।
রক্ত চাপ কমায়
উচ্চ রক্ত চাপ সমস্যায় অনেকেই ভোগেন। ওষুদ খেয়েও যারা ঠিকমত উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন না, তারা নিয়মিত রসুন খেলে ভালো ফলাফল পেতে পারেন।
চুল পাকা রোধে
নিয়মিত রসুন খেলে তা অসময়ে চুল পাকা রোধে সহায়ক ভুমিকা পালন করে।
অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল
রসুনে রয়েছে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুন, যার কারনে নিয়মিত রসুন খেলে ব্যাকটেরিয়াল জনিত রোগ থেকে দূরে থাকা যায়।
অ্যান্টিফাঙ্গাল
আমরা প্রায়ই ফাঙ্গাস জনিত বিভিন্ন ইনফেকশন বা স্কিন রোগে আক্রান্ত হয়, তাদের রসুন নিয়মিত খাওয়া উচিত। রসুনের অ্যান্টিফাঙ্গাল গুন এই ধরনের ফাঙ্গাস ইনফেকশন থেকে আপনাকে দূরে থাকতে সাহায্য করবে।
রক্ত সঞ্চালনক্ষমতা বৃদ্ধি করে
রসুনে থাকা অ্যান্টি অক্সিডেন্ট উপাদা সমূহ রক্ত সঞ্চালনক্ষমতা বৃদ্ধি করে। তাই নিয়মিত রসুন খেলে রক্ত সঞ্চালনক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, যার কারনে অনেক রোগ থেকে মুক্ত থাকা যায়।
হার্টের সমস্যা কমায়
যাদের হার্টের সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য রসুন খাওয়া খুবি প্রয়োজন। রসুন রক্ত সঞ্চালনক্ষমতা বৃদ্ধি করে তাই এটি হার্ট সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
হাড়ের শক্তি বৃদ্ধি করে
রসুনে থাকা ক্যালসিয়াম এবং অন্যান্য খনিজ উপাদান হাড়ের শক্তি কে বৃদ্ধি করে।
সেল ড্যামেজ রোধে
রসুনে থাকা অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সেল গুলোর মধ্যে রক্ত সঞ্চালন রাখতে সাহায্য করে, যা সেলকে ড্যামেজ থেকে প্রতিরোধে সহায়তা করে।
এছাড়া সেক্সে রসুনের উপকারিতা রয়েছে।
রসুন খাওয়ার নিয়ম
রসুন বিভিন্ন ভাবে খাওয়া যায়। যেমনঃ অনেকেই রান্নাতে মসলা হিসেবে, কিংবা ভেজে অথবা কাচা অবস্থায় খেতে পছন্দ করে। তবে একেক ভাবে খাওয়ার জন্য এর পুষ্টি ও কম বেশি হয়।
রসুন কিভাবে খেতে হয়
একজন পূর্ণবয়স্ক ব্যাক্তির প্রতিদিন ২ থেকে ৩টি কোয়া খাওয়া উচিত। ভালো হয় সকালে খালি পেটে চিবিয়ে খেতে পারলে। কারন ভালোভাবে রান্না করলে রসুনের পুষ্টি গুনাগুন কিছুটা কমে যায়।
কাঁচা রসুনের উপকারিতা
কাঁচা রসুন খাওয়ার উপকারিতা কি
কাঁচা রসুন খাওয়ার ক্ষেত্রে উপকার একটু বেশি পাওয়া যায়, কেননা কাঁচা রসুন চিবিয়ে খাওয়ার সময় রসুনে থাকা অ্যালিন রুপান্তর হয়ে অ্যালিসিনে পরিনত হয়। এই অ্যালিসিন অনেক সক্রিও সালফার যৌগে পরিনত হয়। যা মানবদেহের জন্য উপকারি।