জনপ্রিয় মার্কেটপ্লেস ফাইভার নিয়ে ফ্রিল্যান্সিং কমিউনিটির আগ্রহের শেষ নেই।
ফাইভার কি – Fiverr
ফ্রিল্যান্সিং করার জন্য জনপ্রিয় মার্কেটপ্লেস গুলোর মধ্যে Fiverr অন্যতম একটি মার্কেটপ্লেস। এটি ইসরায়েল (Israel) দেশের তৈরী একটি অনলাইন মার্কেটপ্লেস। Fiverr ২০১০ সালে তাদের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে, এবং অল্প সময়েই এরা জনপ্রিয় মার্কেটপ্লেসে রুপান্তর হয়।
ফাইভারে কিভাবে কাজ করতে হয়
যেহেতু ফাইভার একটি অনলাইন মার্কেটপ্লেস, তাই অনলাইন ভিত্তিক সকল কাজ-ই ফাইভার এ করা যায়। ফাইভার এর যে কাজ গুলো সার্ভিস বা সেল দেয়ার মাধ্যমে ফাইভার এ ইনকাম করা যায়, সেগুলোকে ফাইভার এর ভাষায় ফাইভার গিগ(GIG) বলা হয়। সাধারনত এই গিগ গুলো থেকেই ইনকাম(INCOME) জেনারেট করা হয় ফাইভার এ। তাই ফাইভারে আপনি কাজ করতে চাইলে প্রথমে অনলাইন উপযোগী কোন কাজ আপনাকে শিখতে হবে, কাজ শিখতে পারলে আপনি ফাইভারে একাউন্ট করবেন, এবং সেটা নিয়ে গিগ দেবেন। গিগ সঠিক ভাবে দেওয়া হলে, এবং ঠিকভাবে মার্কেটিং, বায়ার রিকুয়েস্ট সেন্ড করলে ক্লায়েন্ট আপনাকে অর্ডার দেবে। ক্লায়েন্টের/বায়ারের ইন্সট্রাকশন অনুযায়ী আপনি ফাইভারে কাজ জমা দিলে তারা(বায়ার) আপনার অর্ডার একসেপ্ট করলেই অর্ডার কমপ্লিট হবে, এবং অর্ডার এর এমাউন্ট (ডলার) আপনার একাউন্টে জমা হবে, সেটা আপনি নির্দিষ্ট সময় পর তুলতে পারবেন। সাধারনত এইভাবেই ফাইভারে কাজ করতে হয়।
Fiverr কিভাবে কাজ করে
Fiverr এ যে কাজ টি আপনি সার্ভিস বা সেলিং(SELLING) এর মাধ্যমে আপনি ইনকাম করতে চান, সেটিকে Fiverr এ রিপেজেন্ট করার উপায় হচ্ছে গিগ। আমরা যেটা নিয়ে কাজ করতে চাচ্ছি, সেটা নিয়ে ডিটেইলস সহকারে আমাদের একটি গিগ তৈরি করতে হবে। গিগ মানেই সার্ভিস। উদাহরন হিসেবে, Fiverr কে একটি দোকান এর সাথে কল্পনা করা যায়, এবং দোকানের যে যে প্রডাক্ট/সার্ভিস আছে, সেগুলো একেকটি গিগ। তাই Fiverr – এ প্রোফাইল তৈরি করার পর প্রথম কাজ হচ্ছে আপনার জানা কাজ টি নিয়ে আকর্ষনীয় গিগ তৈরী করে ফেলা।
গিগ তৈরী করা শেষ হওয়ার পর, গিগটি Fiverr এ পাব্লিস হয়, এবং তারপর আপনার অর্ডার পাওয়ার পালা। কীভাবে অর্ডার পাবেন? আপনার গিগ Fiverr এ রয়েছে, এবং ক্লায়েন্ট বা বায়াররা যখন Fiverr এ এসে কোন সার্ভিস সার্চ করবে, তখন তাদের খোজা সার্ভিস এবং আপনার দেয়া সার্ভিস নিয়ে গিগটি মিলে গেলেই তারা(বায়াররা) আপনার গিগ দেখতে পাবে। এবং গিগের সবকিছু পছন্দ করলে, সে ঐ গিগে অর্ডার দেবে। ক্লায়েন্ট অর্ডার করার পর-ই আপনি আপনার Fiverr একাউন্টে অর্ডারটি দেখতে পাবেন, সাধারনত এভাবেই গিগ কাজ করে থাকে।
ফাইভার একাউন্ট কি
ফাইভার একাউন্ট হচ্ছে ফাইভারে নিজের নামে একটা প্রোফাইল। ফাইভারে একজন ব্যাক্তি একটা একাউন্ট-ই খুলতে পারবেন। এই একটি ফাইভার একাউন্ট-ই আপনি ক্লায়েন্ট/বায়ার কিংবা ফ্রিল্যান্সার হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন।
ফাইভার একাউন্ট খোলার নিয়ম
ফাইভার একাউন্ট খোলার নিয়ম খুবই সহজ। আমরা ফেসবুক বা যেকোনো ওয়েবসাইটে যেভাবে একাউন্ট খুলি, ঠিক সেইভাবেই ফাইভার একাউন্ট খোলা যায় ।
ফাইভার একাউন্ট খোলার জন্য কি কি লাগবে?
ইমেইল
জি, শুধু একটা ই-মেইল আপনার ফাইভার একাউন্ট খোলার জন্য যথেষ্ট। কিন্তু এমন কোনো ই-মেইল দিয়ে একাউন্ট খোলা যায়না, যেটা দিয়ে ইতিমধ্যে Fiverr একাউন্ট খোলা হয়েছিল, বা খোলা আছে।
ফাইভার একাউন্ট খোলার একাউন্ট খোলার আগে কিছু বিষয় খেয়াল রাখা উচিড:
যেগুলো Fiverr ALLOW করে না –
- একই ব্যাক্তির একাধিক Fiverr একাউন্ট
- একই আইপি ইউস করে একাধিক Fiverr একাউন্ট
- একই ডিভাইসে একাধিক Fiverr একাউন্ট
এই ব্যাপার গুলো যখন-ই বললাম তখন ই হয়তো মনে কিছু প্রশ্ন জাগরণ হল তাইনা?
এই ব্যাপার গুলো যখন-ই বললাম তখন ই হয়তো মনে কিছু প্রশ্ন জাগরণ হল তাইনা?
ফাইভার একাউন্ট ভেরিফাই
ফাইভার একাউন্ট খোলার পরের ধাপে আপনাকে আপনার ফাইভার একাউন্ট ভেরিফাই করতে হতে পারে। এখানে ফাইভার একাউন্ট ভেরিফাই যে সব একাউন্টেই চাইবে, বিষয়টা এমন না। যদি কখনো ফাইভার নোটিফিকেশন পাঠিয়ে আপনাকে ফাইভার একাউন্ট ভেরিফাই করতে বলে, তখন আপনি আপনার ফাইভার একাউন্ট ভেরিফাই করবেন। ফাইভার একাউন্ট ভেরিফাই করার জন্য তারা আপনার কাছে স্মার্ট এনআইডি কার্ড চাইবে, স্মার্ট এনআইডি কার্ড না থাকলে আপনি আপনার একাউন্ট পাসপোর্ট দিয়েও ভেরিফাই করতে পারবেন।
চলুন প্রশ্ন গুলোর উত্তর জেনে নেয়া যাক –
আমি যদি ভিন্ন ভিন্ন নাম দিয়ে একাধিক Fiverr একাউন্ট খুলি, Fiverr বুঝবে কিভাবে?
জি, Fiverr এটা বুঝবে। তারা আইপি অ্যাড্রেস, ম্যাক অ্যাড্রেস এবং লোকেশন ট্রাকিং করার মাধ্যমে একই পারসন ডিটেক্ট করতে পারে। মনে রাখবেন, Fiverr আমার বা আপনার চেয়ে বেশি চালাক।
আমি কি ভিন্ন কম্পিউটার, এবং ভিন্ন আইপি অ্যাড্রেস ব্যবহার করে একাধিক Fiverr একাউন্ট খুলতে পারবো ?
দেখুন এটা অনেকেই করে থাকে। এখানে ধরা পরার সম্ভাবনা কম থাকলেও, আপনার একটি ভুলে Fiverr একাধিক একাউন্ট ডিটেক্ট করে ফেলতে পারে। যার ফলে একাধিক Fiverr একাউন্ট একসাথে ব্লক হয়ে যেতে পারে। তাই এটা খুবি রিস্কি। আমার রিকমেন্ডেশন থাকবে এমনটি না করার।
আমার বাসায় একটাই রাউটার, এই রাউটারের আন্ডারে কি ২-৩ জন বা তার বেশি মানুষ একাধিক Fiverr একাউন্ট চালাতে পারবো? আমাদের আলাদা আলাদা কম্পিউটার।
হ্যা পারবেন, কিন্তু একই সার্ভিস সবাই দিলে প্রব্লেম হবে। তাই চেষ্টা করুন এরকম সিচুয়েশন এরিয়ে চলতে।
আমার ২-৩ টা কম্পিউটার, আবার স্মার্টফোন আছে, সবগুলোতে কি একটা Fiverr একাউন্ট চালাতে পারবো?
জি অবশ্যই পারবেন। একটা ব্যাক্তির একাধিক ডিভাইস থাকতে পারে, কিন্তু একটা ডিভাইস কিন্তু একাধিক ব্যাক্তির থাকতে পারেনা। তাই আপনার একটা Fiverr একাউন্ট আপনি চাইলে যত ইচ্ছা ডিভাইসে লগিন করতে পারবেন। কিন্তু একটি সিংগেল ডিভাইসে কখনই একাধিক Fiverr একাউন্ট লগিন করতে পারবেন না।
Fiverr টার্মিনোলোজি
ফাইভার বায়ার (BUYER) :
যখন Fiverr এ কেউ কোন সার্ভিস ক্রয় করেন, তিনিই বায়ার।
ফাইভার সেলার (SELLER) :
Fiverr এ কেউ কোন সার্ভিস অফার করলে, তিনিই সেলার।
ফাইভার কাস্টম অফার (CUSTOM OFFER):
যখন কোন সেলার বায়ারের রিকোয়ারমেন্ট সাপেক্ষে স্পেশাল প্রপোজাল পাঠায়, সেটাই কাস্টম অফার।
ফাইভার অর্ডার (ORDER):
কোন বায়ার সেলারের এর গিগ ক্রয় করলে, সেলার এবং বায়ারের মধ্যের চুক্তিই হচ্ছে অর্ডার ।
ফাইভার অর্ডার পেজ (ORDER PAGE):
সেলার এবং বায়ারের মধ্যে অর্ডার সংক্রান্ত সবকিছু যেখানে আলোচনা হয়, সেটা অর্ডার পেজ ।
ফাইভার গিগ
ফাইভার গিগ কি
সেলার ফাইভার এ যে সার্ভিসগুলো অফার করে, সেগুলোই ফাইভার গিগ ।
ফাইভারে কয়টি গিগ খোলা যায়
যখন কোন নতুন একাউন্ট খোলা হয়, প্রথম অবস্থায় সেই একাউন্টে ৭টি গিগ দেয়া যায়। তবে Fiverr এ সেলারদের সেলিং রিপোর্ট, অর্থাৎ আপনি কেমন কাজ পাচ্ছেন, কত ডলার ইনকাম করলেন, এসবের উপর ডিপেন্ড করে সেলারদের স্বীকৃতি স্বরূপ বিভিন্ন লেভেল বা ব্যাজ দেয়া হয়। Fiverr এর লেভেল গুলোর নাম- লেভেল ১ সেলার, লেভেল ২ সেলার, টপ রেটেড সেলার ইত্যাদি।
ফাইভার লেভেল বিস্তারিতঃ
বিগিনার লেভেল / নিউ সেলার / NEW SELLER
Fiverr এ নতুন একাউন্ট খোলার পর, সেটি একটি নিউ সেলার বা বিগিনার লেভেল একাউন্ট।
এই লেভেলে একজন সেলার সর্বোচ্চ সাতটি (৭টি) গিগ তৈরী করতে পারবে। নিউ সেলার থাকা অবস্থায় অর্ডার কমপ্লিট করার ১৪ দিন পর সেই অর্ডারের পেমেন্ট তার Fiverr একাউন্টে যোগ হবে, এবং সে সেটি উঠাতে(WITHDRAW) পারবে।
ফাইভার লেভেল ১ / LEVEL 1
লেভেল ১ সেলার, নিউ সেলার লেভেলের পরবর্তী ধাপ। লেভেল ১ সেলার হতে, একজন Fiverr সেলার এর মিনিমাম এই রিকুয়ারমেন্ট(REQUIREMENT) গুলি ফিলআপ করতে হবেঃ
- ১০টি অর্ডার কমপ্লিট (সর্বনিম্ন)
- ৪০০ ডলার আর্ন(EARN) করতে হবে (সর্বনিম্ন)
- ৪.৭ স্টার রেটিং
- ৬০ দিন একাউন্টের বয়স
এছাড়া একাউন্টের রেসপন্স রেট, অর্ডার কম্পিলিটেশন রেট এবং ডেলিভারি অন টাইম রেট ৯০% বা এর উপরে থাকতে হবে। একাউন্টে লাস্ট ৩০ দিনে কোনো ওয়ার্নিং ও থাকা চলবেনা।
নোটঃ এতগুলো বিষয় একসাথে দেখে মনে হতে পারে লেভেল ১ সেলার পাওয়া হয়তো কঠিন কোন বিষয়, কিন্তু আসলেই তা নয়। একটু টেকনিক্যাল ভাবে জিনিস গুলো মেইনটেইন করলে, লেভেল ১ সেলার সহজেই হতে পারবেন।
সুবিধাঃ
লেভেল ১ সেলার হওয়ার পর আপনি বাড়তি সুবিধা হিসেবে ১০টি গিগ তৈরী করতে পারবেন।
ফাইভার লেভেল ২/ LEVEL 2
লেভেল ১ সেলার হওয়ার পরের স্টেপ লেভেল ২।
লেভেল ২ সেলার হওয়ার জন্য আপনাকে নিচের রিকুয়ারমেন্টগুলো ফিলআপ করতে হবেঃ
- ৫০টি অর্ডার কমপ্লিট (সর্বনিম্ন)
- ২০০০ ডলার আর্ন(EARN) করতে হবে (সর্বনিম্ন)
- ৪.৭ স্টার রেটিং
- ১২০ দিন একাউন্টের বয়স
এবং লেভেল ১ এর মত, এখানেও একাউন্টের রেসপন্স রেট, অর্ডার কম্পিলিটেশন রেট এবং ডেলিভারি অন টাইম রেট ৯০% বা এর উপরে থাকতে হবে। একাউন্টে লাস্ট ৩০ দিনে কোনো ওয়ার্নিং ও থাকা চলবেনা।
সুবিধাঃ একজন লেভেল ২ সেলার, কাস্টমার সার্ভিসে সাপোর্ট নেয়ার ক্ষেত্রে প্রায়োরিটি(PRIORITY) বেশি পাবেন এবং সর্বোচ্চ ২০টি গিগ তৈরী করতে পারবেন।
ফাইভার টপ রেটেড সেলার / TOP RATED SELLER
টপ রেটেড সেলার Fiverr এর সবচেয়ে হাই লেভেল সেলার৷ Fiverr এর ইডিটোরিয়াল টিম কর্তৃক ম্যানুয়ালি রিভিও সাপেক্ষে সেলারকে টপ রেটেড হিসেবে মনোনীত করা হয়। এক্ষেত্রে ইডিটোরিয়াল টিম সেলারের প্রোফাইলের শেষ ৬০ দিনের পারফরম্যান্স অ্যানালাইসিস করেন এবং নিম্নোক্ত রিকোয়ারমেন্ট গুলো পর্যালোচনা করেন –
- ১০০টি অর্ডার কমপ্লিট (সর্বনিম্ন)
- ২০০০০ ডলার আর্ন(EARN) করতে হবে (সর্বনিম্ন)
- ৪.৭ স্টার রেটিং
- ১৮০ দিন একাউন্টের বয়স
পূর্বের লেভেলর মত, এখানেও একাউন্টের রেসপন্স রেট, অর্ডার কম্পিলিটেশন রেট এবং ডেলিভারি অন টাইম রেট ৯০% বা এর উপরে থাকতে হবে। একাউন্টে লাস্ট ৩০ দিনে কোনো ওয়ার্নিং ও থাকা চলবেনা।
সুবিধাঃ যেহেতু, টপ রেটেড সেলার Fiverr এর সবচেয়ে হাই লেভেল সেলার, তাই এই লেভেলের সুবিধা সবচেয়ে বেশি। অন্যান্য লেভেলে পেমেন্ট পেতে অর্ডার কম্পিলিটের পরও ১৪ দিন অপেক্ষা করতে হলেও, টপ রেটেড সেলারে লাগে মাত্র ৭ দিন। এছাড়া সর্বোচ্চ ৩০টি গিগ খোলা, এবং কাস্টমার সার্ভিস নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রোয়োরিটি সুবিধা রয়েছে।
ফাইভারে গিগ কিভাবে তৈরি করতে হয় জানলেই এখন আপনি ফাইভারে একাউন্ট করার জন্য প্রস্তুত ।
খুব সুন্দর ভাবে বুঝলাম।
ধন্যবাদ
Pingback: ফ্রিল্যান্সিং কিভাবে শিখবো (২০২৩ আপডেট) - বিডি কিক
Pingback: ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস (২০২৩ আপডেটেড) - বিডি কিক