ক্যাশলেস সোসাইটি তৈরি করতে বড় বড় পেমেন্ট নেটওয়ার্ক গুলোর মধ্যে মাস্টার কার্ড অন্যতম নেটওয়ার্ক। সারাবিশ্বব্যাপী ২০২০ সালে মাস্টার কার্ড দিয়ে প্রায় ৬.৩ ট্রিলিয়ন ডলার ট্রানজেকশন হয়। তাই আপনি যদি সারা বিশ্বে ট্রানজেকশন/পেমেন্ট কাজে ব্যবহার করার জন্য একটি নির্ভরযোগ্য কার্ড নিতে চান, আপনার জন্য বেস্ট চয়েস হতে একটি মাস্টার কার্ড । চলুন জেনে নেই মাস্টার কার্ড কি এবং মাস্টার কার্ড করার নিয়ম সম্পর্কে।
মাস্টার কার্ড কি
মাস্টার কার্ড একটি বিশেষ কার্ড যেটা মাস্টার কার্ড নামক পেমেন্ট নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে। আর মাস্টার কার্ড এর এই পেমেন্ট নেটওয়ার্ক বিশ্বব্যাপী সাপোর্ট করে বা বিশ্বব্যাপী মাস্টার কার্ড এর পেমেন্ট নেটওয়ার্ক রয়েছে। তাই আপনার যদি একটি মাস্টার কার্ড থাকে, আপনি সারা বিশ্বে এই কার্ডটি ব্যবহার করতে পারবেন। এই কার্ডটি ব্যবহার করে আপনি সারাবিশ্বে প্রয়োজনীয় অর্থ উত্তোলন করা থেকে শুরু করে সকল প্রকার পেমেন্ট করতে পারবেন।
বাংলাদেশে প্রথম মাস্টার কার্ড চালু করে কোন ব্যাংক
ANZ Grindlays বাংলাদেশে সর্বপ্রথম মাস্টার কার্ড চালু করে ।
মাস্টার কার্ড এর সুবিধা
যদি সহজ ভাষায় বলি, মাস্টার কার্ড এর প্রধান সুবিধা হচ্ছে এটি গ্লোবালি, অর্থাৎ সারাবিশ্বে এবং সকল এটিএম বুথে ব্যবহার করা যায়। আবার দেশের ভিতর মাস্টার কার্ড সাপোর্টেড সকল এটিএম বুথেই আপনি এই কার্ড ব্যবহার করতে পারবেন। আর এখন সকল এটিএম বুথই মাস্টার কার্ড সাপোর্টেড। তাই একটা কার্ড দিয়েই আপনি সারাবিশ্বে, সারাদেশের সকল এটিএম বুথের এক্সেস পাচ্ছেন। পেমেন্টের ক্ষেত্রেও আপনি অনলাইন কেনাকাটা থেকে শুরু করে যেকোনো প্রকার পেমেন্ট মাস্টার কার্ড দিয়ে করতে পারবেন। প্রায় সকল প্রকার অনলাইন ওয়েবসাইট এবং শপ মাস্টার কার্ড পেমেন্ট সাপোর্ট করে।
মাস্টার কার্ড করতে কি কি লাগে

মাস্টার কার্ড কিভাবে করব কিংবা মাস্টার কার্ড করতে কি কি লাগে, প্রশ্নটির উত্তর একেক ব্যাংকের ক্ষেত্রে একেক রকম। অর্থাৎ মাস্টার কার্ড দেওয়ার ক্ষেত্রে একেক ব্যাংকের রিকোয়ারমেন্ট একেক রকম। আর ব্যাংক-ই যেহেতু মাস্টার কার্ড প্রোভাইড করে, তাই ব্যাংকের দেওয়া রিকোয়ারমেন্ট আপনাকে ফলো করতে হবে।
তারপর ও মাস্টার কার্ড করতে যা যা লাগবেই, এরকম একটা কমন লিস্ট জেনে নেই চলুনঃ
- মাস্টার কার্ড করতে আপনার অবশ্যই একটি ব্যাংক একাউন্ট থাকতে হবে।
- জাতীয় পরিচয়পত্র
- রঙিন ছবি
- পাসপোর্ট (ইন্টারন্যাশনাল মাস্টার কার্ডের ক্ষেত্রে)
- নমিনির ছবি, জাতীয় পরিচয়পত্র এবং সাক্ষর
মোটামুটি এই জিনিস গুলো থাকলেই আপনি মাস্টার কার্ড পেয়ে যাবেন।
মাস্টার কার্ড করার নিয়ম

মাস্টার কার্ড করতে আপনাকে মাস্টার কার্ডের জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট নিয়ে আপনার পছন্দের ব্যাংকের নিকটস্থ ব্রাঞ্চে যেতে হবে। এরপর ব্যাংকের দায়িত্বরত কর্মকর্তাকে মাস্টার কার্ড করার নিয়ম জিজ্ঞেস করলে তিনি প্রয়োজনীয় ইন্সট্রাকশন দেবেন। এই ইন্সট্রাকশন-ই মাস্টার কার্ড করার নিয়ম।
মাস্টার কার্ড একাউন্ট
মাস্টার কার্ডের নিজস্ব কোন একাউন্ট নেই, কিংবা মাস্টার কার্ড একাউন্ট হয়না। প্রচলিত ব্যাংক একাউন্টের সাথেই মাস্টার কার্ড কানেক্ট করে দেওয়া হয়।
মাস্টার কার্ড ও ভিসা কার্ডের পার্থক্য

মাস্টার কার্ড এবং ভিসা কার্ড দুইটি ভিন্ন পেমেন্ট নেটওয়ার্ক। অর্থাৎ এরা আলাদা দুটি কোম্পানি। কিন্তু দুটি পেমেন্ট নেটওয়ার্ক-ই সারাবিশ্বে বহুল ব্যবহৃত এবং একই সাথে এরা একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী বা প্রতিযোগী। ব্যাসিক ইউজার এর ক্ষেত্রে এই দুইটি কার্ডের মধ্যে পার্থক্য খুজে বের করা কঠিন। মোটামুটি দুইটি কার্ড একই কাজ করে এবং ওয়াল্ড ওয়াইড এই মাস্টার কার্ড ও ভিসা কার্ড ব্যবহার করা যায়।
স্বাধীন মাস্টার কার্ড
স্বাধীন মাস্টার কার্ড বাংলাদেশের বহুল প্রচলিত একটি মাস্টার কার্ড। এই স্বাধীন মাস্টার কার্ড প্রোভাইড করে বাংলাদেশের ব্যাংক এশিয়া । কার্ড টি ফ্রিল্যান্সার কিংবা সাধারন ব্যাক্তি, এমনকি কোন কোম্পানি তার নিজের কাজে ব্যাবহার করতে পারবে। এটি একটি ডুয়াল কারেন্সি মাস্টার কার্ড।
ফ্রি ইন্টারন্যাশনাল মাস্টার কার্ড
অনেক পেমেন্ট প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক ফ্রি ইন্টারন্যাশনাল মাস্টার কার্ড প্রোভাইড করে থাকে। ফ্রি ইন্টারন্যাশনাল মাস্টার কার্ড পাওয়া যায় এমন উপায় গুলো নিচে দেওয়া হলোঃ
সেলফিন ফ্রি ইন্টারন্যাশনাল মাস্টার কার্ড
ইসলামি ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের সেলফিন অ্যাপে একাউন্ট খুললেই তারা সম্পূর্ণ ফ্রিতে একটি ভার্চুয়াল মাস্টার কার্ড দেয়। অনেকেই জানেন না এই কার্ডটি একটি ইন্টারন্যাশনাল মাস্টার কার্ড। আপনি আপনার নিকটস্থ ইসলামি ব্যাংকের ব্রাঞ্চে গিয়ে ডলার ইন্ডোরস করে এই কার্ডটি দিয়ে যেকোনো ইন্টারন্যাশনাল পেমেন্ট করতে পারবেন। উল্লেখ্য ইন্টারন্যাশনাল কাজের জন্য কার্ডটি ব্যবহার করতে চাইলে অবশ্যই আপনাকে কার্ডে ডলার ইন্ডোরস করতে হবে। ডলার ইন্ডোরস করতে অবশ্যই আপনার নিজস্ব পাসপোর্ট থাকতে হবে। তবে ইন্টারন্যাশনাল পেমেন্ট কাজে ব্যবহার করতে না চাইলে আপনাকে ডলার ইন্ডোরস করা কিংবা পাসপোর্ট থাকা, ব্রাঞ্চে যাওয়া এসবের কোন ঝামেলা আমাকে পোহাতে হবেনা। শুধু মাত্র সেলফিনে টাকা এড করেই আপনি এই ফ্রি মাস্টার কার্ড দিয়ে খুব সহজেই দেশের বিভিন্ন সেবা যেমনঃ বিকাশ, নগদ, রকেটে এড মানি করা, এবং বিভিন্ন জায়গায় পেমেন্ট করা ইত্যাদি পারবেন, খুব সহজে এবং সবকিছুই ফ্রিতে।
পেওনিয়ার মাস্টার কার্ড
ফ্রিল্যান্সারদের ফ্রিতে কার্ড প্রোভাইড করে থাকে পেওনিয়ার নামের পেমেন্ট প্রসেসর। শুরুতে একাউন্ট খুললেই পেওনিয়ার মাস্টার কার্ড দিয়ে থাকলেও, পরবর্তীতে এর অপব্যবহার হওয়ার কারনে এটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। এখন পেওনিয়ার একাউন্টে একজন ফ্রিল্যান্সার যেকোনো মার্কেটপ্লেস থেকে মিনিমাম ১০০ ডলার আনলেই, পেওনিয়ার থেকে মাস্টার কার্ড অফার করে থাকে। পেওনিয়ার কর্তৃক প্রোভাইড করা এই মাস্টার কার্ড ইন্টারন্যাশনাল মাস্টার কার্ড। এবং সকল কাজেই এই ইন্টারন্যাশনাল মাস্টার কার্ড ব্যবহার করা যায়।
ফ্রি ভার্চুয়াল মাস্টার কার্ড
ভার্চুয়াল মাস্টার কার্ড হচ্ছে ভার্চুয়ালি ব্যবহার করা যায়, এমন একটি কার্ড। এই কার্ডের কোন হার্ড ডকুমেন্ট নেই অর্থাৎ এই কার্ড হাতে পাওয়া যায়না। তবে কার্ডের প্রয়োজনীয় নাম্বার দিয়ে আপনি অনলাইনে পেমেন্ট করতে পারবেন। আর এরকম ভার্চুয়াল মাস্টার কার্ড অনেক কোম্পানি ফ্রিতে প্রোভাইড করে থাকে। যেমনঃ বাংলাদেশি ব্যাংকের মধ্যে ইসলামি ব্যাংক এর সেলফিন অ্যাপ এ একাউন্ট খুললে ফ্রিতে ভার্চুয়াল মাস্টার কিংবা ভিসা কার্ড পাওয়া যায়।
আশা করি মাস্টার কার্ড নিয়ে আপনাদের সকল প্রশ্নের উত্তর আপনারা পেয়েছেন।
Pingback: এটিএম কার্ড সম্পর্কে যে বিষয় গুলো অজানা - বিডি কিক