Skip to content
Home » খুশকি দূর করার উপায় (প্রমাণিত ও কার্যকারী)

খুশকি দূর করার উপায় (প্রমাণিত ও কার্যকারী)

খুশকি দূর করার উপায়

প্রত্যেকটি মানুষই জীবনে কোন না কোন সময় চুলের খুশকির সমস্যার সম্মুখীন হয়। অনেকে খুশকি কে তেমন একটা সমস্যা মনে করেন না যতক্ষণ এটি সহ্য করার মত অবস্থায় থাকে। আসল সমস্যা হয় তখন, যখন খুশকি অনেকদিন এবং বেশি পরিমান, বেশিদিন স্থায়িত্ব নিয়ে থাকে।

তাই আমরা আজ খুশকি নিয়ে বিস্তারিত আলাপ করবো। খুশকির প্রতিকার, প্রতিরোধ কিংবা চুলের খুশকি দূর করার উপায় সেগুলো জানার চেষ্টা করব।

খুশকি কি ?

আমাদের মাথায় একটি নির্দিষ্ট সাইকেল(চক্র) অনুযায়ী কোষ পরিবর্তন হয়। কোষের পরিবর্তন বলতে বুঝানো হয়, পুরনো কোষ ঝরে গিয়ে নতুন কোষ উৎপন্ন হয়। অনেকে আবার পুরনো কোষ কে মরা চামড়া বলে থাকে। এই পুরনো কোষ ই জমে গিয়ে তৈরি হয় খুশকি। যা খুব বেশি হলে ঝরে পড়া শুরু করে, এটাই খুশকি।

খুশকি কোথায় কোথায় হতে পারে?

শরীরের অনেক জায়গায় ই খুশকি হতে পারে, তবে সবচেয়ে বেশি খুশকি হতে দেখা যায় মাথায়। এছাড়া মুখে, নাকের দুই পাশে, দাড়ি, গোঁফে, চোখের পাপড়িতে ইত্যাদি জায়গায় ও খুশকি হতে দেখা যায়।

খুশকির ক্ষেত্রে জেন্ডার এবং বয়সের তারতম্য ?

সাধারনত খুশকি পুরুষদের বেশি হতে দেখা যায়, তবে নারীদের ক্ষেত্রেও কম না। এছাড়া তরুন বয়সে খুশকির প্রকোপ বেশি দেখা গেলেও, সব বয়সেই খুশকি হতে পারে।

চিকিৎসা বিজ্ঞানে খুশকি ?

চিকিৎসা বিজ্ঞানে খুশকি কে সেবোরিক ডার্মাটাইটিস বলা হয়। এর ইংরেজি বানান Seborrheic Dermatitis. বাচ্চাদের ক্ষেত্রে এর নাম ডাকা হয় ক্রেডলে ক্যাপ নামে।

খুশকি কেন হয় ?

খুশকির সরাসরি কোন কারন পাওয়া না গেলেও, মনে করা হয় বেশিরভাগ বাহ্যিক কারনেই খুশকি হয়ে থাকে। বাহ্যিক কারন গুলি – যেমনঃ মাথার ত্বকে ময়লা জমে যাওয়া ময়লা, মাথার লোমকূপ বন্ধ হয়ে যাওয়া, ধুলাবালির মধ্যে থাকা।

এছাড়া ম্যলেসেজিয়া নামক ফাঙ্গাস ও খুশকির জন্য দায়ী। পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব, পানি কম খেলেও মরা চামড়ার কারনে এরকম খুশকির সমস্যা হতে পারে।

ত্বক বেশি অয়েলি থাকার কারনেও আপনার খুশকি হতে পারে, এছাড়া বিভিন্ন ধরনের কসমেটিক প্রোডাক্ট আপনার খুশকির কারন হতে পারে।

খুশকি আরো কিছু কারন রয়েছে, যেমন-  টেনশন বা দুশ্চিন্তা, ডিপ্রেশন,পুষ্টিকর খাবারে অভাব, হরমোনের ব্যালেন্স প্রবলেম ইত্যাদি।

খুশকির কারনে কি কি সমস্যা হয়ে থাকে ?

খুশকির কারনে চুল পড়ে যাওয়া, মাথা চুলকানো, মাথার আদ্রতা নষ্ট হওয়া সহ অনেক সমস্যা হতে পারে। এছাড়া খুশকির জন্য আপনি মানুষের সামনে নানা বিব্রতকর সমস্যায় পড়তে পারেন, যেমন – মাথা চুলকানো, জামা কাপড়ে খুশকি লেগে থাকা। অনেক সময় খুশকির মাথায় এত পরিমান হয়, যা চুলকানোর কারনে মাথায় ক্ষত হয়, রোদ্রে মাথা চিট্মিট করে, এমনকি ঘুমানোর ক্ষেত্রেও সমস্যা তৈরি করতে পারে।

খুশকি দূর করার উপায়

খুশকি বড় সমস্যা হলেও, এর সমাধান আছে। তাই খুশকি নিয়ে অযথা দুশ্চিন্তা করবেন না। খুশকির সমস্যা উপর নির্ভর করে এর প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেয়া উচিত। 

খুশকি দুর করতে প্রাথমিক ভাবে আমাদের কিছু অভ্যাস গড়ে তুলা উচিত – 

১.  চুল পরিষ্কার রাখা।

২. চিরুনি পরিষ্কার রাখা।

৩. বালিশের কাভার নিয়মিত ধুয়ে দেয়া।

৪. পর্যাপ্ত পরিমান পানি পান করা।

৫. পুষ্টিকর খাবার খাওয়া।

৬. পর্যাপ্ত ঘুমানো।

৭. গোসল করার আগে, বিশেষ করে শ্যাম্পু যেদিন করবেন, ভালো করে চুল চিরুনি করে নিবেন।

৮. নিয়মিত শ্যাম্পু করা।

৯. চুল ভালো করে ভিজিয়ে শ্যাম্পু করা উচিত।

১০. শ্যাম্পু ব্যবহারের ক্ষেত্রে এন্টি ড্যানড্রাফ শ্যাম্পু ব্যবহার করবেন।

১১. শ্যাম্পু ব্যবহারের ক্ষেত্রে টানা ২ বার ব্যবহার করা উচিত। 

১২. চিরুনি করতে হবে নিয়মিত।

এই অভ্যাস গুলো মোটামুটি নিজের মধ্যে গড়ে তুললে খুশকি নিয়ন্ত্রনে চলে আসবে।

খুশকি দূর করার ঘরোয়া উপায়

এছাড়া খুশকি কমানোর জন্য আপনি বিভিন্ন ঘরোয়া প্যাক তৈরি করে ব্যবহার করতে পারেন। এখানে আমরা সবচেয়ে কার্যকরী ১০টি প্যাক নিয়ে আলোচনা করবো।  এগুলো খুশকি দূর করার প্রাকৃতিক উপায় ও বলা হয়।

১. নারিকেল তেল ব্যবহার খুশকি নিয়ন্ত্রনে সাহায্য করে, কেননা নারিকেল তেল মাথা শুষ্কতা দূর করে এবং এটি খুশকির সহায়ক ছত্রাক এর ক্ষেত্রে আন্টি মাইক্রোবিয়াল হিসেবে কাজ করে।

২. মাথায় পেয়াজের রস ব্যবহারে খুশকি কমে, তাই পেয়াজ বেটে মাথায় লাগিয়ে ২০-২৫ মিনিট অপেক্ষা করুন, এরপর শ্যাম্পু করুন। সপ্তাহে ২ বার ট্রাই করুন, এতে খুশকি অনেকটা কমে যাবে।

৩.অলিভ অয়েল এবং পাতি লেবুর রস মিক্সড করে মাথায় দিতে পারেন, খুশকি কমে যাবে।

৪. লেবুর রস চুলে লাগালে উপকার পাবেন, গোসলের ১ ঘন্টা আগে লেবুর রস লাগান, গোসলের সময় ধুয়ে ফেলুন।

৫. গোসল শেষে লেবুর রস আর পানি মিশিয়ে মাথা ধুয়ে নিতে পারেন, এতে খুশকি অনেক কমে যায়।

৬. মেহেদি বেটে মাথায় লাগানো যেতে পারে।

৭. বেকিং সোডা মাথা মেখে, ভালোভাবে ধুয়ে ফেলবেন, অবশ্যই শ্যাম্পু ধোয়ার জন্য শ্যাম্পু ব্যবহার না করে ভালো করে হাত দিয়ে ঘষে ঘষে দুয়ে ফেলুন।

৮. খুশকির জন্য টকদইের ব্যবহার অনেক পুরনো, তবে কার্যকরী ও বটে, তাই টকদই সপ্তাহে ২ দিন ব্যবহার করতে পারেন। ভালোকরে টকদই মেখে ১০ মিনিট পর মাথা ধুয়ে ফেলবেন।

৯. নিমপাতার পেস্ট মাথায় লাগালেও খুশকি ছাড়া অন্যান্য অনেক সমস্যা দুর হয়। তাই নিমপাতার পেস্ট ব্যবহার করতে পারেন।

১০. অ্যালোভেরার ব্যবহার খুশকি কমাতে সাহায্য করে, তাই চুলে অ্যালোভেরা ব্যবহার করতে পারেন।

এগুলো সবগুলোই যে আপনাকে ব্যবহার করতে হবে, এমনটা না , আপনার সুবিধামত একটি ব্যবহার করুন, একটি কাজ না করলে আরেকটি চেষ্টা করবেন।

খুশকি হলে যেগুলো করা উচিত না ?

অবশ্যই আপনাকে ময়লা পরিবেশ এড়িয়ে চলতে হবে। রাস্তায় বের হলে স্ক্রাপ বা ক্যাপ ব্যবহার করতে হবে।

অন্য কারো চিরুনি, বালিশ ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে। রাত জাগা উচিত না। এলার্জি সমস্যা থাকে এলার্জি জাতীয় খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকবে হবে, এবং এন্টি এলার্জি শ্যাম্পু ব্যবহার করতে হবে। গোসল করার পর ভেজা মাথায় চুল আঁচড়ানো বা চিরুনি করবেন না।

খুব বেশি খুশকি হলে কি করবেন ?

খুব বেশি খুশকির সমস্যায় ভুগলে অবশ্যই আপনাকে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে, একজন চর্ম রোগের ডাক্তার কিংবা মেডিসিন বিশেষজ্ঞ দেখাতে পারেন।

খুশকি দূর করার শ্যাম্পু

আপনার সমস্যা উপর ডিপেন্ড করে ডাক্তার আপনাকে পরামর্শ দেবে, ডাক্তারের অনুমতি ব্যতিত কোন প্রকার ওষুধ বা মেডিকেটেড শ্যাম্পু ব্যবহার থেকে বিরত থাকা উচিত। খুশকি দূর করার শ্যাম্পু হিসেবে বাজারে অনেক প্রডাক্ট-ই পাওয়া যায়।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *