পানিশূন্যতা নাম টা শুনলেই আমরা অনেকেই এই পানিশূন্যতাকে সাধারন বিষয় ভেবে, পানিশূন্যতার বিষয়টিকে হেলাফেলা করি। মনে করি এটা কোন সমস্যাই না। তবে পানিশূন্যতা সমস্যা শরীরের একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পানিশূন্যতা সমস্যা সম্পর্কে আমাদের পরিপূর্ণ ধারনা থাকা উচিত। তাই পানিশূন্যতা নিয়ে আজ আমরা বিস্তারিত আলোচনা করবো। জানার চেষ্টা করবো পানিশূন্যতা কি, পানি শূন্যতা কেন হয়, পানিশূন্যতার রোগের লক্ষণ, পানিশূন্যতা হলে কি হয়, পানিশূন্যতার চিকিৎসা ইত্যাদি বিষয়গুলো।
পানিশূন্যতা কি
পানিশূন্যতা আমাদের শরীরের অনেকগুলো স্বাভাবিক সমস্যা গুলোর মধ্যে একটি। পানিশূন্যতা শব্দটিকে ইংরেজিতে DEHYDRATION বলা হয়। শরীরে যদি পানির ঘাটতি দেখা দেয়, কিংবা পানির স্বল্পতা পরিলক্ষিত হয় তবে সেটাই পানিশূন্যতা (DEHYDRATION) । শরীরে যতটুকু পানির দরকার ঠিক ততটুকু পানি না থাকা, কিংবা এক কথায় শরীরে পানির ঘাটতিই হচ্ছে পানিশূন্যতা।
পানিশূন্যতা কেন হয়
পানিশূন্যতা হওয়ার প্রধান কারণ হচ্ছে প্রয়োজনের তুলনায় পানি কম পান করা। তৃষ্ণার্ত অবস্থা, অর্থাৎ তৃষ্ণা লাগছে এটা পানিশূন্যতার প্রথম সিগন্যাল বলা যায়। তাই তৃষ্ণা লাগার পরপর-ই আপনি যদি যথেষ্ট পরিমানে পানি পান না করেন, তাহলে পানিশূন্যতা সমস্যা দেখা দিতে পারে। আবার আপনার শরীরে যতটুকু পানি প্রয়োজন তার চেয়ে কম পান করলেও পানিশূন্যতা সমস্যা দেখা দেবে।
পানিশূন্যতা হলে কি হয়
শরীরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান হচ্ছে পানি। আমাদের শরীরের শতকরা ৬০ ভাগের চেয়ে বেশি অংশ শুধু এই পানি দিয়ে গঠিত (এইচ এইচ মিচেল (H.H. Mitchell) জার্নাল অনুসারে)। আর শরীরের এই গুরুত্বপূর্ণ পানিই যদি না থাকে, বা শরীর যদি এই পানির অভাবেই ভোগে, তাহলে শরীরে কি অবস্থা হবে বুঝতেই পারছেন? আমাদের শরীরের স্বাভাবিক সকল কার্যক্রম ব্যাহত হবে, একইসাথে দেখা দেবে নানা রকমের শারীরিক অসুস্থতা।
পানিশূন্যতা রোগের লক্ষণ

শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দিলে স্বাভাবিকভাবে শরীরে নানা সমস্যা দেখা দেয়। এই সমস্যা গুলোই পানিশূন্যতা রোগের লক্ষণ হিসেবে প্রকাশ প্রায়। চলুন জেনে নেয়া যাক পানিশূন্যতা রোগের লক্ষণ সমুহঃ
১. আপনার প্রস্রাব এর রং পানিশূন্যতার প্রতীক। যদি দেখেন আপনার প্রস্রাব এর কালার বা রং হলুদ তাহলে বুঝবেন আপনি পানিশূন্যতা সমস্যা তে ভুগছেন।
২. পানিশূন্যতা কারনে প্রস্রাবে প্রচুর দুর্গন্ধ ও হয়। তাই হটাত প্রস্রাবে দুর্গন্ধ দেখা দিলে পানিশূন্যতা সমস্যা কিনা দেখতে হবে।
৩. ঘন ঘন তৃষ্ণা লাগাও পানিশূন্যতার লক্ষণ।
৪. বার ঠোট, মুখ, জিহ্বা শুখিয়ে আশা পানিশূন্যতার লক্ষণ।
৫. শরীরে পানিশূন্যতার অন্যতম লক্ষণ কোষ্ঠকাঠিন্য। কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিলে খেয়াল করতে হবে ঠিকঠাক পানি খাওয়া হচ্ছে কিনা।
কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিলে পর্যাপ্ত পানি পান করা খুবি গুরুত্বপূর্ণ।
৬. পানিশূন্যতা দেখা দিলে শরীরে ক্লান্তিভাব থাকবে, কোন কিছুতে মনোযোগ ধরে রাখা কঠিন হবে।
৩. পানিশূন্যতায় মাথা ব্যাথা এবং মাথা ঘোরার মত সমস্যা দেখা দেয়।
৭. একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের দিনে ৬-৭ বার মুত্র ত্যাগ হওয়া উচিত, যদি তা না হয় তাহলে বুঝতে হবে পর্যাপ্ত পানি খাওয়া হচ্ছে না কিংবা পানিশূন্যতা দেখা দিয়েছে।
৮. পানিশূন্যতা থাকলে প্রস্রাবে জ্বালা পোড়া দেখা দিতে পারে। তাই প্রস্রাবে জ্বালা পোড়া দেখা দিলে খেয়াল করুন আপনি প্রয়োজন মত পানি খাচ্ছেন কিনা।
৯. অনেক সময় পানিশূন্যতার কারনে মুখে ঘা হতে পারে।
৯. আবার শরীরে দুর্বলতার কারণ ও এই পানিশূন্যতা।
শিশুর পানিশূন্যতার লক্ষণ
প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে পানিশূন্যতা সহজে বুঝা গেলেও, শিশুদের ক্ষেত্রে এই পানিশূন্যতা বোঝা তুলনামুলক আলাদা। কারণ তারা ঠিকঠাক তাদের সমস্যা বলতে বা বুঝতেও পারে না। তাই শিশুর পানিশূন্যতার লক্ষণ জানা গুরুত্বপূর্ণ। চলুন জেনে নেই শিশুর পানিশূন্যতার লক্ষণঃ
১. জিহ্বা শুকনো থাকা।
২. ঠোট শুকিয়ে থাকলে।
৩. কান্নার সময় চোখে জল না দেখা গেলে।
৪. ত্বক শুষ্ক দেখালে।
৫. দ্রত বা গভীর শ্বাস নেওয়া।
৬. শুষ্ক চোখ।
৭. হাত ঠান্ডা হয়ে যাওয়া।
৮. হার্টবিট বেড়ে যাওয়া।
এসব কিছুই পানিশূন্যতার কারনে হতে পারে।
পানিশূন্যতার চিকিৎসা
পানিশূন্যতার চিকিৎসা পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে। দৈনিক অন্তত ২ লিটার/৮ গ্লাস পানি পান করলে পানিশূন্যতা রোধ করা সম্ভব। নিচে পানিশূন্যতা রোধের উপায়সমুহ দেওয়া হলঃ
১. আবহাওয়ার উপর নির্ভর করে প্রয়োজনে অতিরিক্ত পানি পান করুন।
২. তাপমাত্রা বেশি হলে পরিশ্রম কমিয়ে দিন।
৩. তাপমাত্রা বেশি হলে, বেশিক্ষণ রোদে থাকবেন না। দরকার হলে ছাতা ব্যবহার করুন।
৪. পানি রয়েছে, এমন ফলগুলো নিয়মিত খাবেন।
৫. সবসময় নিজের কাছে পানি রাখুন।